Thank you for trying Sticky AMP!!

আমদানি কমছে, পণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কা

করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি কমতে শুরু করেছে। টাকার অঙ্কে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে পণ্য আমদানি কমার হার প্রায় ৯ শতাংশ। তবে আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানিতে বেশি ধাক্কা লেগেছে। প্রাথমিক হিসাবে, স্থানীয় রপ্তানি ও সেবা খাত বাদে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে শুধু পণ্য রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, মার্চ মাসে বাণিজ্যিক পণ্য, রপ্তানিমুখী ও দেশীয় শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে মোট ৪২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার। ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছিল ৪৬ হাজার ৯১১ কোটি টাকার। এ হিসাবে আমদানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসের তুলনায় আমদানি কমার এই হার ১৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও পণ্য আমদানি প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।

বেশি কমেছে চীনে, এখন বাড়ছে

পণ্য আমদানিতে শীর্ষ দেশ চীন। চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ফেব্রুয়ারিতেই পণ্য আমদানি কমতে শুরু করে। দেশটি থেকে আমদানি সবচেয়ে বেশি কমেছে গত মার্চে। তথ্যে দেখা যায়, চীন থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাণিজ্যিক ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছিল ১০ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার। গত মার্চে প্রায় ৪১ শতাংশ কমে পণ্য আমদানি ৬ হাজার ২৫৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। এতে গত মাসে আমদানিতে শীর্ষ দেশের তালিকায় চীনকে টপকে উঠে আসে ভারত।

তবে চীনে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। চীনের সঙ্গে চলাচলকারী জাহাজগুলোতেও পণ্য আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। যেমন, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় গতকাল শুক্রবার চীন থেকে ক্যাপ ওরিয়েন্ট জাহাজটি ১ হাজার ৬০২ একক কনটেইনার নিয়ে এসেছে। এই জাহাজ মার্চের শুরুতে মাত্র ৮৮৫ কনটেইনার পণ্য নিয়ে এসেছিল। একইভাবে কুইন ইস্টার জাহাজটি ১০ এপ্রিল বন্দর জলসীমায় পৌঁছাবে, যেটিতে আগের তুলনায় ৬০০ কনটেইনার পণ্য আমদানি বেড়েছে।

>মার্চে পণ্য আমদানি কমেছে ৯ শতাংশ, পণ্য রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ। তবে চীন থেকে আমদানি বাড়ছে।

চীন থেকে জাহাজে পণ্য পরিবহনকারী কোরিয়ার হুন্দাই মার্চেন্ট মেরিনের স্থানীয় প্রতিনিধি ওশেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চীন থেকে এখন যেসব জাহাজ আসছে সেগুলোর প্রতিটিতে ৬০০ থেকে ৭০০ কনটেইনার পণ্য বেশি আসছে। সব কটি জাহাজেই পণ্য আমদানি আগের তুলনায় বেশি।

চীনে বাড়তে শুরু করলেও অন্য দেশগুলো থেকে আমদানি বাড়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন ছাড়া অন্য দেশগুলো থেকে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজে পণ্যের পরিমাণ কমে আসছে।

রপ্তানি দ্রুত কমছে

মার্চে পণ্য রপ্তানি কমার বিষয়টি অনুমিতই ছিল। মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ার তথ্য প্রকাশ করে বিজিএমইএ। ১ এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯ কারখানার ৯২ কোটি পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হয়েছে, যার রপ্তানি মূল্য ২৯০ কোটি ডলার। স্থগিতাদেশ বা বাতিল হওয়া এসব পণ্যের একটি অংশ মার্চের শেষে বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল।

দেশের কারখানাগুলো থেকে রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৮টি ডিপোর মাধ্যমে কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। এরপর বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের কারণে কারখানা থেকে প্রস্তুত পণ্যও ডিপোতে আসার হার কমে আসছে বলে ডিপো মালিকদের সংগঠন বেসরকারি কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন বিকডা জানিয়েছে।

বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, দেশের রপ্তানি পণ্যের ৯২ শতাংশ ডিপোর মাধ্যমে যায়। আগে যেখানে ডিপো থেকে বন্দরে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ কনটেইনার জাহাজে তোলার জন্য পাঠানো হতো, এখন তা কমে ১ হাজার কনটেইনারে নেমেছে।

মার্চের শেষে পণ্য রপ্তানি কমার প্রভাব ফেলেছে পুরো মাসে। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকার। গত মার্চ মাসে রপ্তানি হয় ২০ হাজার ৮০১ কোটি টাকার। এ হিসাবে রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের এই হিসাব স্থানীয় রপ্তানি ও সেবা খাতের রপ্তানি আয় ছাড়া হিসাব করা হয়েছে। সব যুক্ত করে চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

এদিকে টাকার অঙ্ক ছাড়াও পণ্য রপ্তানির পরিমাণও কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার টন পণ্য রপ্তানি হয়, যেখানে গত মাসে হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টন পণ্য। চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ফেব্রুয়ারিতেই পণ্য রপ্তানি কমতে শুরু করে। এখন পণ্য রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ–আমেরিকার দেশগুলোতেও কমতে শুরু করেছে। কাস্টমসের হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন আগে যেখানে গড়ে ১৩ হাজার টন করে পণ্য রপ্তানি হতো সেখানে মার্চের শেষ সপ্তাহে হয়েছে প্রতিদিন ৩ হাজার ৭৬২ টন করে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় আমদানিতে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। মার্চে চীন থেকে আমদানি কমলেও এখন তা বাড়ার আভাস ইতিবাচক। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি বাড়তে থাকবে। কারণ, দেশটি করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। এখন যেটি বেশি দরকার, তা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎস দেশগুলো থেকে আমদানি নিশ্চিত করা। করোনার কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে জোর দিতে হবে। আর রপ্তানি কমার বিষয়টি অনুমিত ছিল। বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পণ্য রপ্তানি বাড়বে না।