Thank you for trying Sticky AMP!!

আরেকটি বিশ্ব মন্দা আসছে!

অবাধ মুক্ত বাণিজ্যের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা বলছে, তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অযৌক্তিক কর ও শুল্ক আরোপের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক মুক্ত পণ্য বাণিজ্য বড় ধরনের হুমকিতে পড়বে। পণ্য বাণিজ্য কমে গেলে তা ২০০৭ সালের মতো বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দা সৃষ্টি করবে।

পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলে চীনের পাঁচ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি পণ্যের ওপর সম্প্রতি ২৫ শতাংশ কর আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে চীনা ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া ইউরোপ, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর বাড়তি কর আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ ও ইস্পাত আমদানিতে ১০ শতাংশ কর বসানো হয়েছে, যা চলতি জুন থেকে কার্যকর হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে চীন ও ইইউ। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ হি গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন ও ইইউ বহুপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু রাখতে একসঙ্গে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, পণ্য বাণিজ্যে একপেশে নীতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। চীন ও ইইউ এ ধরনের একচোখা নীতির বিরোধিতা করে এবং মনে করে, এমন উদ্যোগ বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে মন্দা ও অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করবে। ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিরকি কাতাইনেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুক্ত পণ্য বাণিজ্য লেনদেনের ব্যবস্থা থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন। এ নীতির অংশ হিসেবেই চীন ও ইইউ থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি কর ও শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে গত শুক্রবার ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩০ কোটি ডলারের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছে। এতে ইউরোপিয়ান কারের ওপর নতুন শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য নতুন নিয়ম প্রকাশ করতে যাচ্ছে। চীনের কোম্পানিগুলোর ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চীনের ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার রপ্তানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা আগামী ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে যাবে।

পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যের মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চীনের পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারে। গতকাল মার্কিন ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময়মূল্য গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় চলে এসেছে। চীনের প্রধান সব পুঁজিবাজারের সূচকও নিম্নমুখী।

বাণিজ্য নিয়ে চলমান এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতেই মূলত একজোট হয়ে কাজ শুরু করেছে চীন ও ইইউ। তবে তাদের নিজেদের সমস্যাও কম নয়। যেমন চীনের বাজারে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ও বিনিয়োগে এখনো নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। একইভাবে চীনের মুক্ত বাণিজ্যবিষয়ক উদ্যোগ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রতিও ইউরোপে সমর্থন ততটা জোরালো নয়। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে সামনের দিনে একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করাও চলমান বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য।

চীনে ব্যবসা করতে গিয়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন চায়না। এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চীনে ব্যবসা থাকা অধিকাংশ ইউরোপীয় কোম্পানি বৈষম্যের স্বীকার। ইউরোপে চীনা কোম্পানিগুলো যেসব সুবিধা পায়, তার অনেক কিছুই চীনে পায় না ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সমস্যা দূর করতে আগামী জুলাইয়ে একটি সম্মেলনে দুই পক্ষ নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ হি। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগও ভবিষ্যতে ইইউয়ের উন্নয়ন কৌশলে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ইউনাইটেড স্টেটস অব সেন্সাস ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৭ সালে চীন থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যসেবা আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র চীনে রপ্তানি করেছে ১৩ হাজার কোটি ডলারের পণ্যসেবা। এ হিসাবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি ডলার, যা চীনের পক্ষে আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইইউতে রপ্তানি হয় ২৮ হাজার কোটি ডলারের পণ্যসেবা। আর ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ৪৩ হাজার কোটি ডলার। ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি ডলার।