Thank you for trying Sticky AMP!!

আলু চাষে বিঘায় লোকসান সাড়ে ৬ হাজার টাকা

কৃষকদের কাছ থেকে কেনা আলু বস্তায় ভরছেন ব্যাপারীর (ব্যবসায়ী) লোকজন। সম্প্রতি বগুড়ার অন্যতম সবজির মোকাম মহাস্থান হাটে। ছবি: সোয়েল রানা

দেশের অন্যতম উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় আলুর বাজারদরে নজিরবিহীন ধস নেমেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব জাতের আলুর দাম মণপ্রতি গড়ে ১০০ টাকা কমেছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে আলু বিক্রি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকেরা। চাষিরা বলছেন, প্রতি বিঘায় তাঁদের লোকসান হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। 

এ বছর আলুর বাজারে এই সংকটের কারণ বিগত বছরের লোকসান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবার মৌসুম শেষে দাম ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষক ও ফড়িয়ারা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করেননি। এতে লোকসান দিয়েছেন হিমাগার মালিকেরা। এবার তাঁরা ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ পাননি। ফলে আলু কেনার জন্য তাঁরা ফড়িয়া ও কৃষকদের ঋণ দিতে পারেননি।
হিমাগার মালিকেরা সাধারণত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফড়িয়া ও কৃষকদের বস্তাপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ঋণ দেন। এতে তাঁদের হিমাগারে আলু রাখার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। আর মার্চ-এপ্রিলে হিমাগারে মজুত করার জন্য আলু কেনার সময় অর্থের জোগান আসে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হতে পারে, যা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম।
বগুড়ার বুড়িগঞ্জ এবং জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট হাটে গত সোমবার এবং বগুড়ার কিচক হাটে গত রোববার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটে প্রতি মণ অ্যাসটরিক জাতের আলু ২২০ টাকা, রোমানা জাতের আলু ২০০ টাকা ও দেশি গুটি পাকড়ি আলু ৩০০ টাকা মণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে। বুড়িগঞ্জ হাটে আলু কিনতে যাওয়া ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, সব ধরনের আলুর দাম মণপ্রতি গড়ে ১০০ টাকা কমেছে।
একই হাটে আলু বিক্রি করতে যাওয়া কৃষক রফিকুল ইসলাম বিস্তারিত হিসাব দিয়ে জানান, তাঁর প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে গড়ে ২২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। বিঘায় ফলন হয়েছে গড়ে ৮০ মণ। হাটে প্রতি মণ আলু ২২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি। এতে বিঘায় লোকসান হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে। নাজমুল হোসেন ও আবু তাহেরসহ কয়েকজন কৃষক একই তথ্য জানান। নাজমুল বলেন, এবার হিমাগার থেকে আলু কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। তাই হাটে ক্রেতা নেই, দামও কম। বোরো ধান আবাদের খরচ জোগাতে সস্তায় আলু বিক্রি করতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া অঞ্চলের ৪৯টি হিমাগারে গত মৌসুমে সাড়ে ২৩ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মৌসুম শেষে ১৫ শতাংশের মতো আলু হিমাগারে পড়ে থাকে।
কালাই উপজেলার আরবি কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিমল প্রসাদ বলেন, বাজার বিপর্যয়ের কারণে গতবার তাঁদের ৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এবার আলু সংরক্ষণে কৃষক-ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই। তিনি সামান্য কিছু টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছেন। তাঁর হিমাগারে এখনো প্রায় ৫০ হাজার বস্তার বুকিং খালি রয়েছে।
পুনট কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার পাল বলেন, এ হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৭৫ হাজার বস্তা। গতবার ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বুকিং শেষ হয়েছিল। এবার মধ্য মার্চেও ৭৫ হাজার বস্তার বুকিং বাকি। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, গতবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে মালিকেরা শত শত কোটি টাকা ঋণ ও ভাড়া আদায় করতে পারেননি। পুঁজি হারানোর পরও অনেক হিমাগার মালিক এবারও ধারদেনা করে কৃষক-ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বুকিং নিচ্ছেন।