Thank you for trying Sticky AMP!!

আড়াই কোটি লোক কাজ পাবে

দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল করিডর বিষয়ে গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত l ছবি: প্রথম আলো

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলতে পারলে ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর সার্বিকভাবে ওই অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা ওই অঞ্চলের বর্তমানের কর্মসংস্থানের চেয়ে তিন গুণের বেশি।

এই অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করতে সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, নৌপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী ৩০ বছরে ১৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ বা বিডা) এক অনুষ্ঠানে এই সমীক্ষাটি উপস্থাপন করা হয়। সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সমীক্ষা উপস্থাপন করেন এডিবির পরামর্শক মনীষ শর্মা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।

এডিবির উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, এই করিডর দেশের দুটি অঞ্চলের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগসূত্র আরও গভীর করবে। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এক দিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে পণ্য ও সেবার বাজার সুবিধা তৈরি হবে। মূলত ছয়টি জেলাকে কেন্দ্র করে এই করিডর হবে। জেলাগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও যশোর। এই জেলাগুলো হবে শিল্পপণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র। করিডরটি হলে ওই অঞ্চলের উৎপাদনশীলতা ২০৫০ সালে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি হবে।

এডিবি আরও বলছে, এই করিডর হলো একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা। এই করিডরের আওতায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার করতে হবে। করিডরের মূল সড়ক হবে যশোর-খুলনা-বাগেরহাট-গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট-ভাঙা-পদ্মা সেতু-ঢাকা; যশোর-মাগুরা-ফরিদপুর-পাটুরিয়া-ঢাকা এবং যশোর-নড়াইল-কাশিয়ানী-ভাঙা-পদ্মা সেতু-ঢাকা।

এ ছাড়া ১৭টি রেল লিংক ও ৪টি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো, ৮টি নদীবন্দর ও ২টি নৌপথ নির্মাণ করতে হবে। এই করিডরের জন্য ঢাকা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরিশাল ও যশোর বিমানবন্দর কাজে লাগানো যাবে। এ জন্য এসব বিমানবন্দরের উন্নয়ন করে ২০৫০ সালের মধ্যে পরিবহনের সক্ষমতা বছরে ৫০ লাখ টনে উন্নীত করতে হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা ৭৮ কোটি টনে উন্নীত করার প্রয়োজন হবে।

আলোচনা:

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের সমন্বিত উন্নয়নে এই করিডর কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ দেশে পণ্য ও সেবার অভ্যন্তরীণ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। যদিও অভ্যন্তরীণ চাহিদা আরও বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদাই আমাদের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে। যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচনকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার বস্ত্র খাতের রপ্তানি বেশ ভালো। বাংলাদেশও বেশ ভালো করছে। তবে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনা দরকার। তাঁর মতে, রপ্তানি পণ্যে দেশীয় মূল্য সংযোজন করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উদাহরণ হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই করিডর উন্নয়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দরকার। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা জমি। উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণ করা যেতে পারে। কেননা, লবণাক্ত পানির কারণে ওই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি আছে। সেখানে শুধু গবাদিপশু চড়ে বেড়ায়।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক করিডর হলে ওই অঞ্চলে শ্রমঘন শিল্পকারখানা তৈরি হবে, যা কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব কাজী সফিকুল আযম, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ প্রমুখ।