Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যবসা বাড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা এসেছেন রংপুরের স্বপ্না

এসএমই মেলায় নিজের স্টলে পণ্য বিক্রি করছেন স্বপ্না রানী দাস। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

রংপুরের নিসবেতগঞ্জের শতরঞ্জিপল্লিতে প্রায় ২৭০ জন শিল্পী-কর্মী নিয়ে দুটি কারখানা চালান স্বপ্না রানী সেন। করোনাকালে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলায়ও আরেকটি কারখানা স্থাপন করেছেন। সেখানে কাজ করেন ৩০ জন কর্মী। তিন কারখানায় তৈরি শতরঞ্জি, পাটের তৈরি পাপোশ, মাদুর (ম্যাট), দস্তরখানা, কম্পিউটার ব্যাগ—এসব পণ্য প্রদর্শন করতে রাজধানীতে জাতীয় এসএমই মেলায় অংশ নিয়েছেন স্বপ্না।

আলাপকালে স্বপ্না রানী প্রথম আলোকে নিজের ব্যবসা সম্পর্কে আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা শোনান। জানান, এবারের মেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আঙিনায় এখন আট দিনের জাতীয় এসএমই মেলা চলছে। মেলার তৃতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার স্বপ্না রানীর সঙ্গে তাঁর স্টল রংপুর ক্র্যাফটেসে কথা হয়। টানা বর্ষণে প্রথম দুই দিন মেলায় ব্যবসা তেমন ভালো হয়নি স্বপ্না রানীর। বলেন, সাধারণত মেলায় দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। এ বছর আড়াই দিন পার হয়ে গেলেও সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকার পণ্য।

করোনার আগে স্বপ্না রাণীর রংপুর ক্র্যাফটসের মাসিক বিক্রি ছিল ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। করোনায় তা কমে ৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছিল। কিন্তু হাতে কাজের ফরমাশ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়নি।

তারপরও স্বপ্না রানী এসএমই মেলা নিয়ে আশাবাদী। কারণ, আগের মেলায় যেসব বিক্রয়াদেশ পেয়েছিলেন, সেগুলো নিয়েই টিকে ছিলেন করোনার মন্দায়। বলেন, ‘করোনার আগে আমার মাসিক বিক্রি ছিল ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। করোনায় তা কমে ৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছিল। কিন্তু হাতে কাজের ফরমাশ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়নি।’
মফস্বলের এই উদ্যোক্তা জানান, ঢাকার ১০টি প্রতিষ্ঠান তাঁর রংপুর ক্র্যাফটসের পণ্য কিনে নেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশীয় হস্তশিল্প বিক্রির প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি ও একতা। এ ছাড়া রংপুর শহরে তাঁদের দুটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। করোনার আগে পরিকল্পনা ছিল ঢাকাতেও নিজেদের একটা শোরুম দেবেন। কিন্তু করোনা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি।

স্বপ্না রানী বলেন, ‘করোনার সময় অনলাইনে বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনলাইনের খুচরা ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে পাইকারি পণ্য নিয়েছেন। অনলাইনে পণ্য বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। ফলে, নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খোলার জন্য খরচ করব কি না, তা এখন ভেবে দেখছি।’
অনলাইনে যুক্ত হওয়ার ফলে করোনার পরে রংপুর ক্র্যাফটসের মাসিক বিক্রি বেড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। মাঝেমধ্যে ক্রেতার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি।

লেখাপড়া সম্পর্কে স্বপ্না রানী জানান, তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। আর তাঁর স্বামী নয়নমণি সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। দুজনে মিলে ২০০৯ সালে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ১০ নারীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন শতরঞ্জির এই ব্যবসা। তখন তাঁদের পুঁজি ছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এখন নয়নমণি রংপুরে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম সামলান, আর স্বপ্না ক্রয়, বিপণন ও জনসংযোগ—এসব দেখেন। সে অনুযায়ী জাতীয় এসএমই মেলায় অংশ নিতে স্বপ্না রানী কয়েকজন কর্মী নিয়ে ঢাকায় এসেছেন বলে জানান।

করোনায় সরকারের দেওয়া ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা ঋণ পেয়েছেন স্বপ্না রানী। তিনি জানান, ঋণের সেই ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা কিছুটা বাড়িয়েছেন। নিজেরা সরাসরি পণ্য রপ্তানির কাগজপত্রও প্রায় তৈরি করে ফেলেছেন।

স্বপ্না বলেন, ‘আমরা দুজনই একটা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতাম। কাজের সূত্রে আমাদের রংপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরতে হতো। আমার স্বামীর রাজশাহী রেশম বোর্ড থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছিল। পরে আমরা শতরঞ্জির ব্যবসা শুরু করি।’
করোনায় সরকারের দেওয়া ৪ শতাংশ সুদে প্রণোদনা ঋণ পেয়েছেন স্বপ্না রানী। তিনি জানান, ঋণের সেই ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা কিছুটা বাড়িয়েছেন। নিজেরা সরাসরি পণ্য রপ্তানির কাগজপত্রও প্রায় তৈরি করে ফেলেছেন।