Thank you for trying Sticky AMP!!

ঋণের সুদের হার না কমালে আমানত মিলবে না

>সরকারি সংস্থার আমানত রাখা যাবে ৬ শতাংশ সুদে।
যারা ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামাবে না, তারা আমানত পাবে না।

ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো আমানত পাবে না। যেসব ব্যাংক এরই মধ্যে ৯ শতাংশে ঋণ দিচ্ছে, তারাই পাবে এ আমানত। তবে আমানতের সুদের হার হতে পারবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান গতকাল সোমবার এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনাটি গতকাল থেকেই কার্যকর। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে আমানতের সর্বোচ্চ সুদ ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ঋণের সুদ ২০ দশমিক ৫ শতাংশ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নানা নির্দেশনা দিয়ে সরকার বাজার ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। বেঁধে দেওয়া সুদের হার কার্যকর করা যাবে কি না, নির্দেশনা দেওয়ার আগে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এমনিতেই আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ৬ শতাংশ যদি আমানতের সুদ হয়, আর একই পরিমাণ যদি মূল্যস্ফীতি হয়, মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন।

গতকাল পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিলের অর্থ দেশের কোনো ব্যাংক বা সরকার-নির্ধারিত অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (লিজিং কোম্পানি) জমা রাখতে পারবে। স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থাকা প্রকল্পের জন্য সরকার তাদের যে অর্থ দেয়, সে অর্থও তারা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে জমা রাখতে পারবে। বিশেষ নোটিশ আমানত (এসএনডি), সঞ্চয়ী হিসাব এবং স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রাখা এসব আমানতের বিপরীতে সুদ হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। তবে ৯ মাস আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ২ আগস্ট যেসব ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এরই মধ্যে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা এ সুবিধা পাবে না।

কোনো ব্যাংক কত সুদে ঋণ দেয় ও আমানত নেয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি তালিকা চেয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত ও ঋণের সুদকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে এ তালিকা তৈরি করে। গতকালের চিঠি তৈরির আগে এ তালিকা বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে যেসব উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে এবং ঋণ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কেউই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি।

আমানতের সুদ ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে
বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে, তিন মাস বা তার বেশি কিন্তু ছয় মাসের কম মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে ২৭টি ব্যাংক ৬ শতাংশ বা তার কমে আমানত নেয়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতার পাশাপাশি চারটি বিদেশি ও ১৭টি বেসরকারি ব্যাংক এ তালিকায় রয়েছে।

বাকি ৩০টি ব্যাংক একই ধরনের আমানত নেয় ৬ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত। বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক, আইএফআইসির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ছয়টি ব্যাংক এবং বিদেশি চার ব্যাংক রয়েছে এ শ্রেণিতে।

ক্ষুদ্র শিল্পে বেশি সুদ
ঋণের সুদকে পাঁচটি শ্রেণি করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ, ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধন, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে চলতি মূলধন এবং ট্রেড ফাইন্যান্সিং।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদের হার ক্ষুদ্র শিল্পে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে। এক্সিম ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, বিদেশি ৭ ব্যাংকসহ মোট ৩৫টি ব্যাংক ৯ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়। আর ৯ থেকে ১৩ শতাংশ সুদ নেয় রূপালী, এনসিসিসহ ৭টি ব্যাংক। সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় ১৩টি ব্যাংক।

এদিকে বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় এক্সিম, আইএফআইসি, ঢাকাসহ ২৩টি ব্যাংক। রূপালী, ডাচ্‌-বাংলাসহ ১৭টি ব্যাংক সুদ নেয় ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত। আর অগ্রণী, বেসিক, ইসলামীসহ ১৭টি ব্যাংক সুদ নেয় ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

চলতি মূলধনেও সুদ বেশি
ক্ষুদ্র শিল্পে চলতি মূলধনে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয় রূপালী, ঢাকা, এমটিবি, ট্রাস্ট, ইউনিয়নসহ ৩৬টি ব্যাংক। যমুনা, প্রিমিয়ারসহ ৭টি ব্যাংক এ শ্রেণিতে সুদ নেয় ৯ থেকে ১২ শতাংশ। অগ্রণী, জনতা, ইসলামী, সীমান্তসহ ১৪ ব্যাংক সুদ নেয় ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে চলতি মূলধনেও ৯ দশমিক ৫০ থেকে ১৭ শতাংশ সুদ নেয় ২৪টি ব্যাংক। আর ৯ থেকে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ নেয় ব্র্যাক, মেঘনা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডসহ ১৮টি ব্যাংক। সোনালী, কৃষি, রাকাবসহ ১৫টি ব্যাংক চলতি মূলধনে সুদ নেয় ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

এ ছাড়া বাণিজ্য অর্থায়নেও সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদ নেওয়া হয় বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি ব্যাংক ৯ দশমিক ৫ থেকে ১৬ শতাংশ, ৮টি ব্যাংক ৯ থেকে ১৩ শতাংশ এবং ১৩টি ব্যাংক ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিয়ে থাকে।

সার্বিক বিবেচনায় মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, জোর করে বা চাপিয়ে দিয়ে যে এসব জিনিস হয় না, এক বছরের বেশি সময় ধরে তা দেখা যাচ্ছে। সুদের হার না কমে উল্টো বাড়ছে।