Thank you for trying Sticky AMP!!

একটি ভালো কোম্পানি, খারাপ ১০০ কোম্পানির চেয়ে উত্তম

শাকিল রিজভী, পরিচালক, ডিএসই

রবি আজিয়াটা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাতে দেশের বড় দুটি মুঠোফোন অপারেটরের মধ্যে নানামুখী প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। কারণ, দেশের মুঠোফোন অপারেটরদের মধ্যে শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এখন এ খাতের দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাতে দুই কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। তাতে গ্রাহকদের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।

দেশের দুটি বড় মুঠোফোন অপারেটরের ব্যালান্সশিট বা স্থিতিপত্র আমরা দেখতে পাব, সেগুলো নিয়ে বিচার–বিশ্লেষণের সুযোগ ঘটবে। কিন্তু তালিকাভুক্ত না হলে সেই সুযোগ তৈরি হতো না। আবার একই খাতের প্রধান প্রতিযোগী দুই কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাতে কোম্পানি দুটির আর্থিক বিবরণীও স্বচ্ছ থাকবে বলে আমি মনে করি।

ভালো মানসম্মত ও বহুজাতিক কোম্পানি সব সময়ই শেয়ারবাজারের বড় স্তম্ভ (পিলার)। আমাদের বাজারের গভীরতা বাড়াতে হলে এ ধরনের বড় কোম্পানি আরও বেশি দরকার।

এ ছাড়া রবি আজিয়াটা যেহেতু অনেক বড় মূলধনী কোম্পানি এবং তারা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে বিপুল পরিমাণ শেয়ার ছাড়বে, তাই কোম্পানিটি বাজারে এলে তাতে বাজার মূলধনও অনেক বেড়ে যাবে। আবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় শেয়ারবাজারের মূলধনও বৃদ্ধি পাবে। ভালো মানসম্মত ও বহুজাতিক কোম্পানি সব সময়ই শেয়ারবাজারের বড় স্তম্ভ (পিলার)। আমাদের বাজারের গভীরতা বাড়াতে হলে এ ধরনের বড় কোম্পানি আরও বেশি দরকার। আবার কোম্পানির আইপিওর আকার বড় হলে তাতে আবেদনকারীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। অধিক সংখ্যক মানুষের শেয়ার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে নতুন অনেক বিনিয়োগকারী ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। তাই রবি আজিয়াটাও শেয়ারবাজারে নতুন অনেক বিনিয়োগকারী নিয়ে আসবে।

অনেকে বলছেন, মাত্র ৪ পয়সা শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস নিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে রবি। এ জন্য অনেকে সমালোচনাও করছেন। কিন্তু আমি মনে করি, এটি বিনিয়োগকারীদের বড় দুশ্চিন্তার কারণ হবে না। আমার মনে আছে, সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম যখন শেয়ারবাজারে এসেছিল, তখন কোম্পানিটির উৎপাদনই শুরু হয়নি। বাজারে আসার পর সাত–আট বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশও দেয়নি। এর পরের অবস্থা তো আমরা সবাই জানি।
সাধারণত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে উন্নত করপোরেট সুশাসনের চর্চা থাকে। ব্যালান্সশিটসহ আর্থিক প্রতিবেদনও অনেক বেশি স্বচ্ছ হয়। শেয়ারবাজারে আমরা অনেক কোম্পানি দেখেছি, যেগুলো বাজারে আসার আগে মুনাফা ও মূলধন ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে কিছুদিন লেনদেন না হতেই এসব কোম্পানির আয় কমতে শুরু করে। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের চর্চা কম হয়। তারা আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখায় না।

শেয়ারবাজারে মানহীন বা নিম্নমানের ১০০ কোম্পানি আনার চেয়ে রবি আজিয়াটা বা এ ধরনের একটি কোম্পানি আনা বাজারের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

আমি মনে করি, শেয়ারবাজারে মানহীন বা নিম্নমানের ১০০ কোম্পানি আনার চেয়ে রবি আজিয়াটা বা এ ধরনের একটি কোম্পানি আনা বাজারের জন্য অনেক বেশি উপকারী। অর্থাৎ ভালো একটি কোম্পানি ১০০ খারাপ কোম্পানির চেয়েও উত্তম। সে বিবেচনায় আমি মনে করি, রবির আইপিও অনুমোদন চলতি বছরে শেয়ারবাজারের জন্য সবচেয়ে ভালো সংবাদ। কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রেও এটি শেয়ারবাজারের ব্র্যান্ডিংকে আরও উন্নত করবে।
ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হলে তাদের কিছু প্রণোদনাও দিতে হবে। গ্রামীণফোন যখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তখন কোম্পানিটিকে ১০ শতাংশ করছাড় দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে কোম্পানিটির করহার আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে আমি মনে করি, ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে ন্যূনতম ১০ শতাংশ করছাড় দেওয়া উচিত। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করতে পারে।