Thank you for trying Sticky AMP!!

এক সভাতেই ৪৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) পরিচালনা পর্ষদ এক সভাতেই প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। গত ২৭ জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর আগে ব্যাংকের এক সভায় এত বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃ তফসিলের ঘটনা বিরল। বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃ তফসিল করার পরও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে সেপ্টেম্বর শেষে।

ইসলামী ব্যাংক সূত্র জানা গেছে, গত ২৭ জুন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় যে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে শীতলপুর অটো স্টিল মিলের ৪১৩ কোটি, ইউনিলায়েন্সের ২৫৮ কোটি, মেসার্স রবিউল ইসলামের ২৫৬ কোটি, ওশিন স্পিনিংয়ের ২৩৯ কোটি, ওয়েসিস হাইটেক সোয়েটারের ৮৬ কোটি, প্রধান ট্রেডার্সের ১৩১ কোটি, সিস্টার ডেনিমের ২৩৫ কোটি, শাহ আমিন উল্লাহর ১৩৯ কোটি, ইসলাম ব্রাদার্সের ২২৭ কোটি, পদ্মা অ্যাগ্রোর ১০৬ কোটি, দাদা সোর্সিংয়ের ১০১ কোটি, আবেদ টেক্সটাইলের ৯৪ কোটি, মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের ১২০ কোটি, ভূঁইয়া ফ্যাশনের ৭৫ কোটি ও এক্সক্লুসিভ স্পিনিংয়ের ৬৮ কোটি টাকা। তবে পর্ষদ সভায় এ–ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এসব ঋণ পুনঃ তফসিল করা হবে। এসব ঋণের বেশির ভাগই ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তনের আগের ঋণ। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে কিছু ঋণ পুনঃ তফসিলের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাকিগুলো অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সম্প্রতি সরকারের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এককালীন ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ১২ বছরের মধ্যে ঋণ শোধের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। তবে ইসলামী ব্যাংকের এসব ঋণ পুনঃ তফসিল করা হবে আগের নিয়মে। 

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে কয়েক দফা ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে গত ২০ নভেম্বর ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের মাধ্যমে প্রশ্ন করা হলে তারও কোনো জবাব মেলেনি গতকাল পর্যন্ত। 

>গত ২৭ জুন প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিলের সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয় ৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।

পর্ষদের এক সভায় বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃ তফসিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তনের ফলে নতুন গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা চলে গেছে। তারা কীভাবে ব্যাংকটি চালাচ্ছে, এটা বড় প্রশ্ন। এক সভায় কীভাবে এত টাকার ঋণ নিয়মিত হয়? তাহলে পর্ষদ সভায় কি কোনো আলোচনা হয় না? যেহেতু মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, তাই ব্যাংকটির দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ নজর রাখতে হবে।’ 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জুন মাস হওয়ায় ব্যাংকটি এত ঋণ পুনঃ তফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একটি না দুটি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আমি নিশ্চিত নই। তবে চূড়ান্তভাবে এসব ঋণ নিয়মিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে।’ 

এদিকে, ২৭ জুন বড় অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল করায় ওই মাস শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমে হয় ৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। অথচ এর আগে মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। আর গত সেপ্টেম্বর শেষে তা আবারও বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। 

ইসলামী ব্যাংক দেশের বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমানত, ঋণ, আমদানি, রপ্তানি, প্রবাসী আয়, গ্রাহক—সবকিছুতেই শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে।