Thank you for trying Sticky AMP!!

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা: জমা ৫ হাজার কোটি টাকা

শাখার মাধ্যমে সারা দেশে যে ব্যাংক সেবা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় তা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। যে কারণে ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিতদের অনেকের অবস্থাই আগের মতো রয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র ৫ বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক তৈরি হয়েছে ৩৪ লাখের কিছু বেশি। আর তাঁরা জমা করেছেন ৫ হাজার কোটি টাকার আমানত।

আজকাল এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সুবাদে বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের উপকারভোগীদের কাছে। যেসব ব্যাংক এ সেবায় জোর দিয়েছিল, তারাই বর্তমান তারল্য সংকটের সময়ে একটু ভালো অবস্থানে ও স্বস্তিতে আছে। এখন পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংক এ সেবা চালু করেছে। 

নতুন ধরনের এই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দ্রুতই পৌঁছে গেছে গ্রামগঞ্জে। সারা দেশের সাড়ে ৮ হাজারের বেশি পয়েন্টে এ সেবা দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনীত এজেন্টরা। ফলে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা, স্কুলেও বসেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ভাতাও গ্রামগঞ্জে সহজে পাওয়া যাচ্ছে এজেন্টদের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণও করছে অনেক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সেবার হালনাগাদ চিত্র নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে শুরু থেকে কাজ করছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে। শুধু টাকা জমা ও ঋণ দেওয়া নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আরও নানামুখী ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে।’ 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ সেবায় ১৫ লাখ ৩৮ হাজার গ্রাহক তৈরি করে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। এরপরই ব্যাংক এশিয়া তৈরি করেছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার। সেবাটি চালুর অল্প দিনেই ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক। আর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের সেবার হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় ৫ গুণ বেশি। ফলে এর মাধ্যমে ব্যাংক সেবা যে গ্রামে পৌঁছে গেছে, তা প্রতীয়মান হয়। আবার নারী হিসাবধারীর তুলনায় পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। 

শুধু গ্রাহক হিসাবের দিক থেকে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক শীর্ষে থাকলেও এজেন্ট ও আউটলেট বিস্তৃতিতে ব্যাংক এশিয়া শীর্ষে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির আউটলেট ২ হাজার ৯৬০টি, যা ডাচ্‌–বাংলার ২ হাজার ৯৫৩টি। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আউটলেট ৫৬৭টি ও ইসলামী ব্যাংকের ৪৯৯টি। 

তবে সবচেয়ে বেশি আমানত পেয়েছে আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, এরপরই ডাচ্‌-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক। আর এজেন্টের মাধ্যমে ৭ ব্যাংক বিতরণ করেছে ২৩৭ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া একাই দিয়েছে ২১০ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংক দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা 

এজেন্টদের মাধ্যমে গত জুন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ডাচ্‌-বাংলা ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা এনেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনটিতে বলেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং বিকাশের অন্যতম কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী সেবা প্রদান। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তাঁর বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং তাই কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত প্রসারিত করছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। 

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণে আমরা একদিকে গ্রামের আমানত পাচ্ছি। আবার এজেন্টদের কারণে প্রবাসী আয় আসাও বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটও আমাদের নেই।’