Thank you for trying Sticky AMP!!

এজেন্ট ব্যাংকিং: ৬ বছরে ৪০ লাখ গ্রাহক

টাকা। প্রতীকী ছবি

ব্যাংকিং সেবা, কিন্তু সেবা দিচ্ছে গ্রামে–গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার আউটলেট। এতে টাকা জমা, তোলা, স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ ও প্রবাসী আয় তুলতে আর ব্যাংকের শাখায় দৌড়াতে হচ্ছে না। নিজ বাড়ির পাশের হাটবাজার বা ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রে থাকা এজেন্ট বা আউটলেট থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা মিলছে। টাকা জমা বা তোলা হলে তাৎক্ষণিক বার্তা যাচ্ছে নিবন্ধিত মুঠোফোনে। যাতে হিসাব সম্পর্কে সব সময় হালনাগাদ থাকছে গ্রাহক। এভাবে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচকানাচে।

কার্যক্রম শুরুর মাত্র ৬ বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখের কিছু বেশি। এসব গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় জমা করেছেন ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত। ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। আর এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয়।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিয়ে ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফিন্যান্সের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কম খরচে সব জায়গায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার এ উদ্যোগ সফল হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা জনগোষ্ঠী সেবার আওতায় এসেছে। এটা আরও জোরদার করতে হবে, যাতে পুরো দেশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আসে।’

 বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘কোনো এজেন্ট যাতে প্রতারণা করতে না পারে, এ জন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। আর গ্রাম থেকে এনে পুরো টাকা শহরে বিতরণ করা যাবে না। এতে আঞ্চলিক বৈষম্য আরও প্রকট হবে।’

জানা যায়, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ব্রাজিলে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। পাইলট কার্যক্রম শুরু করে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায়। জৈনসার ইউনিয়নের ব্যবসায়ী ইসলাম শেখকে প্রথম এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে ব্যাংকটি।

>

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া
পাইলট কার্যক্রম শুরু করে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায়

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারছেন। উপযোগ সেবা বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদান করতে পারছেন এজেন্টরা। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন এসব এজেন্ট।

এনআরবি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশে শাখার মাধ্যমে ব্যাংক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আর শাখা ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ জন্য সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। তবে এজেন্টদের জন্য মুনাফা করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য এজেন্টদের আমানত সংগ্রহে বেশি মনোযোগী হতে হবে। গ্রাহকও বাড়াতে হবে।

নতুন ধরনের এ এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দ্রুতই পৌঁছে গেছে গ্রামগঞ্জে। সারা দেশের সাড়ে ৯ হাজারের বেশি পয়েন্টে এ সেবা দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনীত এজেন্টরা। ফলে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা, স্কুলেও বসেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেওয়া ভাতাও গ্রামগঞ্জে সহজে পাওয়া যাচ্ছে এজেন্টদের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণও করছে অনেক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং বিকাশের অন্যতম কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী সেবা প্রদান। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তাঁর বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং তাই কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত প্রসারিত করছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশজুড়ে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার এখনো অনেক সুযোগ আছে। আমরা অল্প সময়ে ৩০০–এর বেশি এজেন্ট নিয়োগ করেছি। এজেন্টদের মাধ্যমে আমরা সারা দেশে ছোট ছোট ঋণ বিতরণ করছি। তবে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নেমে এলে তাতে ছোট ঋণ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ এসব ঋণে খরচ অনেক বেশি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে মোট ২২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। তবে ১৯টি ব্যাংক দেশব্যাপী তাদের এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যে ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সেগুলো হলো ডাচ্‌–বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড, দি সিটি, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এবি ব্যাংক, এনআরবি, ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংক।

যোগাযোগ করা হলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণে আমরা গ্রাম থেকে ভালো আমানত পাচ্ছি। এ কারণে প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। এজেন্টদের কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা স্বস্তিতে আছি।’