Thank you for trying Sticky AMP!!

এলাচির কেজি ৫ হাজার টাকা, প্রবৃদ্ধি ২০৪%

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম গতকাল রোববার সকালে বাজারে গিয়েছিলেন ‘গরমমসলা’ কিনতে। আড়াই শ গ্রাম জিরা, এক শ গ্রাম করে দারুচিনি, এলাচি ও গোলমরিচ কেনার পর দোকানদার মোট ৮০০ টাকা চাইল।

কামরুল ইসলাম আঁতকে উঠলেন। জানতে চাইলেন, এত হলো কী করে। দোকানদার বললেন, এক শ গ্রাম এলাচির দাম-ই তো ৬০০ টাকা। কামরুল ইসলাম আর এক শ গ্রাম এলাচি নিলেন না, কিনলেন ২৫ গ্রাম। দামি বাদ দিয়ে কিনলেন কিছুটা কম দামি এলাচি।

পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। পরে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, তাঁর পাঁচজনের সংসারে ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৪৮০ টাকা। এক শ গ্রাম এলাচি কেনার খরচ পুরো মাসের বিদ্যুৎ বিলকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তিনি এটাও বলেন, এক শ গ্রাম এলাচি কয়েক মাস চলে যায়।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এলাচির সর্বনিম্ন দাম এখন প্রতি কেজি ৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর ভালো মানের এলাচির কেজি উঠেছে ৬ হাজার টাকায়। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত বছরের এ সময়টার তুলনায় এলাচির দাম এখন ২০৪ শতাংশ বেশি।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এলাচির দামটা দুই বছর ধরে বাড়তি। তবে বড় ধাক্কা এসেছে গত দুই মাসে। বাড়তে বাড়তে গত সপ্তাহে দাম ৬ হাজার টাকায় উঠেছে। তিন বছর আগে সাধারণ এলাচির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে ছিল। আর দু-একটি জাতের ভালো মানের এলাচির দাম ৩ হাজার টাকার নিচে ছিল। 

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০১৬ সালে ঢাকায় এলাচির গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ১ হাজার ২৪০ থেকে ১ হাজার ৪৪০ টাকা। ২০১৯ সালে ছোট এলাচির গড় দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ২ হাজার ৩১৬ টাকা, বেড়েছে ৩২ শতাংশ। আর বড় এলাচির দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা, বেড়েছে ৩২ থেকে ৪৪ শতাংশ। 

মাংস ও এ–জাতীয় খাবার রান্নায় এলাচি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় মিষ্টান্নের মধ্যেও দু-একটি এলাচি ছেড়ে দেন রাঁধুনিরা। এলাচির কাজ সুগন্ধ বাড়ানো। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরার বাইরে মাংস রান্নায় দারুচিনি, এলাচি ও গোলমরিচ অথবা লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ফলে কমবেশি এলাচি মানুষকে কিনতেই হয়। 

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে এলাচির চাহিদা ৭ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫ হাজার টন। আর অনানুষ্ঠানিক পথে আরও দুই হাজার টনের মতো এসেছে। গত বছরের গড় দাম বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, দেশে বছরে এলাচির বাজারের আকার ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার। 

দামটা এত বাড়ল কেন, জানান পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারকেন্দ্রিক বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, দেশে আমদানি হয় মূলত গুয়াতেমালার এলাচি। আবার ভারত থেকেও কিছু আসত। কিন্তু গত দুই মৌসুম ভারতে ফলন ভালো হয়নি। এ কারণে তারাই এখন গুয়াতেমালা থেকে কিনছে। এতে বৈশ্বিক বাজার চড়ে গেছে। তিনি জানান, পাইকারি বাজারেই এখন এক কেজি এলাচি সাড়ে তিন থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচিতে নিলামে এলাচির সরবরাহ কম। দাম বাড়ছে। কারণ, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম। এতে আরও বলা হয়, গত ৩ জানুয়ারি নিলামে প্রতি কেজি এলাচির গড় দাম উঠেছে ৩ হাজার ৮৭৪ রুপি (৪ হাজার ৬১৭ টাকা)। অবশ্য ভারতীয় এলাচির মান গুয়াতেমালার চেয়ে ভালো।

এলাচি অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয় যে টিসিবি খোলাবাজারে বিক্রি করবে। মানুষ সেটা প্রত্যাশাও করে না। কিন্তু পরিবারের ব্যয় বেড়েছে। যেটা আগে থেকেই ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার কারণে বাড়তি। 

ব্যবসায়ী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববাজারের যা পরিস্থিতি, তাতে কয়েক মাসে দাম কমার আশা কম।’