Thank you for trying Sticky AMP!!

করের চাপে চিনি তেতো

নতুন করে বাড়তি কর আরোপের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। বাজেট ঘোষণার পর তিন দিনে চিনির দাম কেজিপ্রতি দুই টাকার বেশি বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে সয়াবিন ও পাম তেলের দামও।

নতুন বাজেটে চিনির ওপর বাড়তি কর আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। হিসাব করে দেখা গেছে, নতুন কাঠামোয় প্রতি কেজি চিনিতে কর দাঁড়াবে ২১ টাকার মতো, যা আগের চেয়ে প্রায় ৫ টাকা বেশি।

চিনির তেতো দিকটি হলো, এ নিয়ে দুই দফা চিনির ওপর বড় ধরনের কর আরোপ করা হলো। এবার বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় নতুন করে কর আরোপ করা হয়েছে। যদিও চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ১ লাখ ১০ হাজার টন চিনি আমদানি করে বিপুল লোকসান দিয়েছে। ব্যাংকঋণ নিয়ে আমদানি করা ৫০০ কোটি টাকার চিনি গুদামে কেন পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছিল সংসদীয় কমিটি।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই বিএসএফআইসির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৯৮২ কোটি টাকা, যা আগের পুরো বছরের চেয়ে ১৪৯ কোটি টাকা বেশি। দুই বছর আগে চিনি শিল্প করপোরেশনের লোকসান ছিল ৪৮১ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে অপরিশোধিত চিনির টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। আবার নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৩০ শতাংশ। পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্টে চিনি আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য (ট্যারিফ ভ্যালু) টনপ্রতি ৩২০ ডলার নির্ধারণ করে এর ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পরে ডিসেম্বরে ট্যারিফ ভ্যালু বাড়িয়ে টনপ্রতি ৩৫০ ডলার করা হয়। আগে থেকেই প্রতি টন চিনিতে আমদানি শুল্ক ২ হাজার টাকা ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ছিল ১৫ শতাংশ।

এ শুল্কহারটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় শেষের দিকে ছিল। বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান চিনির শুল্ক বাজেটে কী করে এল। পরে তিনি বলেন, এ শুল্ক থাকবে না। কিন্তু আগস্টে আবার ওই শুল্ক আরোপ করা হয়।

কেজিতে কর ২১ টাকা

চিনি আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু বা শুল্কায়ন মূল্য এখন ৩৫০ মার্কিন ডলার। এর ওপর ৩ হাজার টাকা আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ধরলে প্রতি কেজি চিনির আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ৪৯ টাকা। সম্প্রতি একজন আমদানিকারক প্রতি টন ৩২৬ ডলারে চিনি আমদানি করেছেন। ফলে কর ছাড়া ব্যয় কেজিপ্রতি পড়েছে প্রায় ২৮ টাকা। নতুন হারে সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনিতে কর দাঁড়াচ্ছে ২১ টাকার মতো।

>প্রতি কেজি চিনিতে এখন কর-ভ্যাট দাঁড়াল ২১ টাকা
পাইকারি বাজারে দাম বাড়ছে
ভোজ্যতেলের বাজারও বাড়তি
২০১৫ সালেও চিনিতে উচ্চ হারে কর আরোপ করে সরকার, যাতে রাজি ছিলেন না অর্থমন্ত্রী
বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে চিনি আমদানি করে বড় লোকসান দিয়েছে বিএসএফআইসি

আমদানিকারকদের দাবি, এর বাইরেও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) আরোপ করা হয়েছে নতুন বাজেটে, যা প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফলে চিনির শুল্ক আরও বাড়বে। অবশ্য চিনির দাম ওঠানামার সঙ্গে করের পরিমাণ ওঠানামা করবে। এখন বিশ্ববাজারে চিনির দাম একেবারেই কম। বিশ্বব্যাংক এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসে বলেছে, সামনে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তখন করও বাড়বে।

দাম বাড়ছে

বাজেটে ভোজ্যতেলের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এত দিন পরিশোধনকারীরা তিন পর্যায়ে ৫ শতাংশ করে ভ্যাট আমদানি পর্যায়ে দিতেন। তাঁদের জন্য এ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তিন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। যদিও রেয়াত সুবিধা থাকবে। এতে ভোজ্যতেলের ওপর করভার তিন টাকার মতো বাড়তে পারে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার পর পাইকারি বাজারে চিনির দাম আড়াই টাকা ও সয়াবিন তেলের দাম দুই টাকার কিছু বেশি বেড়েছে। ঢাকার পাইকারি বাজারেও চিনি ও পাম তেলের দাম আড়াই টাকার মতো বেড়েছে। বোতলজাত তেল ও প্যাকেটজাত চিনির দামে হেরফের হয়নি। খুচরা বাজারে এখন খোলা চিনি প্রতি কেজি ৫৪ টাকা ও সয়াবিন তেল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ পর্যায়ে এখনো দামের প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবার তেল-চিনি আমদানিকারকদের একটি বৈঠক আছে। জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমরা কর দিতে চাই। তবে সেটা একসঙ্গে আমদানি পর্যায়ে দিলে ভালো হয়।’