Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় চড়া ডালের দাম

ঢাকার দক্ষিণ মণিপুরের একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আহমদ আলীকে বাসার পাশের মুদিদোকান থেকে আড়াই শ গ্রাম মোটা দানার মসুর ডাল কিনতে হয় ২০ টাকা দিয়ে, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১৫ টাকা। তাতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। 

 আহমদ আলী তাঁর আট হাজার টাকা বেতনের বড় অংশই বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। নিজে দুই হাজার টাকায় সব খরচ চালান। তাঁর দৈনন্দিন কেনাকাটার বড় অংশ জুড়ে থাকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও সবজি। ডাল থাকেই। 

 দেশে গত কয়েক মাসে সবচেয়ে বেশি যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল। তাই মসুর ডালের উৎপাদন, সরবরাহ ও দাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বরাত দিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে দাম বেড়েছে ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ। অবশ্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গত ২৫ মার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এক বছরে মোটা দানার মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ ও সরু দানার ডালের দাম ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। 

 নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কেনে মোটা দানার ডাল। ডিসেম্বর মাসেও ঢাকার বড় বড় খুচরা বাজারে মোটা দানার মসুর ডাল ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। আর পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানে পাওয়া যেত ৬০ টাকা দরে। এখন বড় বাজারেই মোটা দানার ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি দানার ডাল ডিসেম্বরে ছিল কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এখন তা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। আর ছোট দানার ডাল ডিসেম্বরে ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। এখন তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। 

 বাংলাদেশে ডাল আমদানি হয় মূলত অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশে দাম বাড়তে থাকে। 

 বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ডালের দামটা বেড়ে গেছে আতঙ্কের কেনাকাটায়। বাজারে এখনো ব্যাপক চাপ। 

 ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মসুর ডালের চাহিদার ৫৪ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আর দেশে চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন। কমিশন আরও বলছে, মসুর ডালের মাসিক চাহিদা ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টন হলেও পবিত্র রমজান মাসে তা বেড়ে ৮০ হাজার টনে দাঁড়ায়। কমিশন মনে করে, রমজান ও করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবে কর্মহীন মানুষকে ত্রাণ দিতে মসুর ডালের চাহিদা বাড়বে। তাই সরবরাহে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। 

 শুধু মসুর ডাল নয়, বাজারে অন্যান্য কিছু ডালের দামও বাড়তি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী, মুগ ডালের কেজি ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা, যা এক বছরে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। খেসারি ডালের দাম কেজি ৮৫-৯৫ টাকা, এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। মাষকলাইয়ের দাম কেজি ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা, এক বছরে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। 

 অবশ্য অ্যাংকর ডালের দাম তেমন একটা হেরফের হয়নি। কেজি ৪০ টাকার আশপাশে। ছোলার দাম গত বছরের চেয়ে কম। তবে পবিত্র রমজান ঘনিয়ে আসতেই সাধারণ ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় উঠেছে। 

 রমজান উপলক্ষে টিসিবি ৫০ টাকা কেজিতে ডাল বিক্রি করছে। অবশ্য তা শুধু শহর এলাকায় এবং সীমিত পর্যায়ে।

 নিরাপত্তাকর্মী আহমদ আলী বলেন, তাঁর মতো লোকের পক্ষে টিসিবির ট্রাক খুঁজে ডাল কেনা কঠিন।