Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনারোধে গাড়ির পরিচর্যা

গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা। ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি কোভিড–১৯ নামের এই ভাইরাস উন্নয়নশীল দেশকেও গ্রাস করেছে। নবজাতক শিশু, বৃদ্ধ বা যুবক—আক্রান্তের সারি থেকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। এই সময়ে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা মানবদেহের জন্য যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ব্যবহার্য জিনিসও পরিষ্কার না থাকলে রোগবালাই ছড়ানোর শঙ্কা থেকেই যায়। নিজের বা পরিবারের জন্য ব্যবহৃত গাড়িটিও এর ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ সময়ের যত্নের কথা মাথায় রেখে আপনার বাহনটিকে নিরাপদ করতে এই সময় আপনিও নিতে পারেন কিছু বাড়তি সতর্কতা। 

গাড়িটি ধুয়ে নিন
চকচকে ঝকঝকে গাড়ি চড়তে কার না ভালো লাগে! গাড়িটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত গাড়ি ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন গাড়ি ধোয়ানো সম্ভব না হলে জীবাণুনাশক তরলমিশ্রিত পানি দিয়ে গাড়িটি মুছতে হবে। যেসব স্থানে গাড়িতে চড়ার জন্য মানুষের হাতের স্পর্শ লাগে, সেসব স্থান গুরুত্ব দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। গাড়ির দরজার হাতল, স্টিয়ারিং, ড্যাশবোর্ড ও আসন ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গাড়ির পাপোশে ধুলাবালু জমে থাকে। তাই পাপোশগুলো বের করে নিয়ে আলাদাভাবে পরিষ্কার করলে জীবাণু থেকে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। গাড়ির ভেতর পরিষ্কার করতে জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করুন।

স্টিয়ারিং ধরার আগে হাত ধুয়ে নিন
বাড়িতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে হাত ধোয়া, যেমন জরুরি, গাড়িতে প্রবেশের আগেও হাত ধুয়ে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। গ্লাভস ব্যবহার করার অভ্যাস করতে পারলে আরও ভালো। তবে এক গ্লাভস এক দিনের বেশি ব্যবহার না করাই শ্রেয়। গাড়ি যদি চালক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে চালককেও হাত ধোয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিন। গাড়ির দরজা খুলতে যে হ্যান্ডেল ব্যবহৃত হয়, সেখানে স্যানিটাইজার দিয়ে স্প্রে করলে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এ সময় বাড়তি সতর্কতার জন্য প্রতিবার গাড়িতে ওঠার সময় এই অভ্যাসগুলোর প্রতি সচেতন হওয়া উচিত।

গাড়িতে স্যানিটাইজার রাখুন
জীবাণুমুক্ত থাকতে গাড়িতে স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করুন। গাড়িতে যাত্রী ওঠার পর তাঁর হাত স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে বলুন। তিনি যেখানে হাত রেখে গাড়িতে উঠেছেন, সেখানে স্যানিটাইজার স্প্রে করে দিন।

গাড়িতে টিস্যু বক্স ব্যবহার করুন
সাধারণ হাঁচি–কাশি এলে গাড়ির ভেতর টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। সে জন্য গাড়িতে টিস্যু বক্স রাখতে হবে। গাড়ির চালক এবং যাত্রী, উভয়ের ক্ষেত্রেই টিস্যুর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু ফেলার জন্য এ সময় বিন ব্যবহার করা যেতে পারে। গাড়ি যেহেতু বদ্ধ থাকে, সেহেতু হাঁচি–কাশির মাধ্যমে রোগজীবাণু দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। তাই রাস্তার পাশে অথবা যেখানে গাড়ি পার্ক করা হবে, সেখানে ময়লা ফেলার স্থানে ব্যবহৃত টিস্যুগুলো দ্রুত ফেলে দিতে হবে।

গাড়ির আসনে পা ওঠানো বা জুতার স্পর্শ লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে
অনেকেই গাড়ির ভেতর পা তুলে বসেন। ক্লান্তিতে জুতাসহ আসনের ওপর পা তুলে দিতেও দেখা যায়। এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে–সেখানে থুতু ফেলার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এমনকি চলন্ত অবস্থায়ও এই ধরনের আচরণ অন্যের জন্য ক্ষতিকর।

ভেতর থেকে দরজা খুলে দিতে চেষ্টা করুন
গাড়িতে ওঠার পর আপনার হাত যেহেতু পরিষ্কার, সেহেতু নিজেই গাড়ির দরজা খুলে দিতে চেষ্টা করুন। এতে অন্যের হাত থেকে জীবাণুর সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে।

রাইড শেয়ারে যাত্রীকে সতর্ক করুন
রাজধানী এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে রাইড শেয়ারিংয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে চালককে যাত্রী ওঠানোর আগে যাত্রীর হাতে স্যানিটাইজার স্প্রে করতে হবে। গাড়িতে বসার নিয়মাবলি সম্পর্কে যাত্রীকে অবগত করা যেতে পারে। এ ছাড়া নির্দেশিকাগুলো প্রিন্টেড কাগজে চালক বা প্রথম সারির যাত্রীর আসনের পেছনে নোটিশ হিসেবে প্রদর্শন করে সতর্কতা অবলম্বন করানো যায়। এতে সামাজিক সচেতনতাও সৃষ্টি হবে। 

গাড়ি পরিষ্কার করতে ব্লিচ ব্যবহার করবেন না
বাসাকে জীবাণুমুক্ত রাখতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে গাড়ির ক্ষেত্রে তা ভুলেও ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি গাড়ির টায়ার বা রিম জীবাণুমুক্ত রাখতেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যাবে না। এটি গাড়ির ইন্টেরিয়রের রঙের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই গাড়ি পরিষ্কার করতে ডেটল বা স্যাভলনমিশ্রিত পানি ডিটারজেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করে ব্যবহার করতে পারেন। 

গ্লাস বন্ধ করে গাড়ি চালাতে হবে
এখনকার বেশির ভাগ গাড়ি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। তাই যাত্রাপথে গাড়ির গ্লাস বন্ধ রাখা উচিত। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন প্রচুর ধুলাবালু থাকে। এই সব ধুলাবালু থেকে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া যানজটে গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় অন্য গাড়ির চালক বা যাত্রী থেকেও ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জানালার কাচ তুলে গাড়ি চালালে ইন্টেরিয়রের সৌন্দর্য ধুলামুক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। 

অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন
কারণে–অকারণে অনেক জিনিস গাড়িতে রাখা হয়। অনেক সময় পুরোনো পানির বোতলও জমে যায়। পুরোনো জিনিস দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় রেখে দিলে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টির কারণ হতে পারে। করোনাভাইরাস না সরালেও অন্য রোগের সূত্রপাত হতে পারে। তাই গাড়ির বুট এবং প্যাসেঞ্জার স্পেসে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।