Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার কোপে কমবে ২৫% প্রবাসী আয়

দেশে দেশে করোনা মহামারির কারণে লকডাউন জারি হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। করোনার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায়ও ওই অঞ্চলের অর্থনীতিগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেওয়ায় তারা অভিবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। এর বড় কোপ পড়ছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর। এতে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে বড় পতনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।

ডব্লিউইএফের সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পূর্বাভাসের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, চলতি ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমে হবে ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে যেতে পারে। এই আয় গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও দেখা গেছে, গত মে মাসে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স ২৫ শতাংশ কমেছে। এই কমে যাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় দেশের লাখ লাখ পরিবারের আয়ে এবার ভয়াবহ টান পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে ডব্লিউইএফ।

করোনার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোয় পর্যটন, সেবা ও নির্মাণ খাতে কর্মরত অসংখ্য অভিবাসী সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন। সিঙ্গাপুরপ্রবাসী শ্রমিকেরা ব্যাপকহারে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার বাহরাইন, কুয়েত, মালদ্বীপ, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় বাংলাদেশও এখনই তাঁদের ফিরিয়ে নিতে ইতস্তত করছে। ভ্রমণের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর এই বেকার প্রবাসীরা যদি দেশে ফিরে আসেন তাতে সংকট আরও গভীর হবে। সে জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সুপারিশ হলো, বাংলাদেশের এখনই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতেই নয়, করোনার পরও অভিবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতে উদ্যোগী হতে হবে।

বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ প্রবাসী। দেশের অর্থনীতিতে তাঁরা কতটুকু অবদান রাখেন, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। যেমন, গত বছরে প্রবাসী শ্রমিকেরা যে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। 

>ডব্লিউইএফের প্রতিবেদন
করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের কাজ হারানো, ফিরে আসতে বাধ্য হওয়ার কারণে প্রবাসী আয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে

অর্থপ্রবাহ নিশ্চিতে নীতিমালা 

প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ঠিক রাখতে সরকার ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রবাসী শ্রমিকদের বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করতে চলতি ২০১৯–২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে প্রবাসীদের প্রতি ১০০ টাকায় ২ টাকা হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। কিছু ব্যাংক অবশ্য প্রবাসী আয়ের সুবিধাভোগীদের অবশ্য অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে বলে শোনা যায়। প্রবাসী আয়ের বিপরীতে সরকারের প্রণোদনা দেওয়ার এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে মনে করে ডব্লিউইএফ। সংস্থাটি বলছে, মূল শ্রমবাজারগুলোতে প্রবাসী আয় উৎসাহিত করতে এই নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা উচিত।

 প্রযুক্তি ও সেবাদাতাদের ভূমিকা 

অনেক আধুনিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রবাসীদের কাছে দেশে টাকা পাঠানোর সর্বাধিক জনপ্রিয় উপায় হলো দেশে ফেরা অন্য কোনো প্রবাসী বা এজেন্ট। করোনার কারণে এখন তা একরকম বন্ধ। এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ডিজিটাল বা প্রযুক্তিভিত্তিক পদ্ধতিতে বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোর দিকে বেশি নজর দিতে বলেছে। 

গত মার্চে প্রবাসী আয়ের সেবার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএএমটিএন একটি সমীক্ষা চালায়। এতে বলা হয়, করোনার কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাধারণত বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেকেই ওই দেশগুলো থেকে আসে।