Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় ঘরে কাজ, তবু জীবন যাচ্ছে কেটে

ঘরে বসে কাজ করছে িবশ্বের অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং। প্রতিষ্ঠানটি মূলত দুটি উৎস থেকে তাদের পণ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে একটি উৎস আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের ১৪টি কারখানা। অন্যটি ব্যক্তিপর্যায়ের উৎপাদনকারীরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের কারখানাগুলোর মধ্যে সাতটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কর্মীদের আগাম এক মাসের বেতন দিয়ে। আর যে সাতটি চলছে, সেগুলোতে মাস্ক ও বিশেষ সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) তৈরির কাজ হচ্ছে। এখন পণ্যের জন্য আড়ংয়ের মূল উৎস হলেন ব্যক্তি খাতের উৎপাদকেরা। তাঁদের মধ্যে আবার করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আছে বা ভিড় বেশি হয়, এমন অঞ্চলের ব্যক্তিদের কাজ করতে বারণ করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিপর্যায়ের অনেকেই একদম ঘরে বসে কাজ করছেন বলে জানান আড়ংয়ের চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত অচল। করোনা নিয়ে দেশজোড়া আতঙ্ক। সামাজিক সংযোগ এড়িয়ে চলার নিরন্তর তাগিদ সর্বত্র। কিন্তু জীবনের তাগিদে সামাজিক সংযোগ এড়িয়ে নিজ ঘরে কাজে মনঃসংযোগ করা মানুষের অভাব নেই।

দেশের নানা প্রান্তে আড়ংকে পণ্য সরবরাহ করা ব্যক্তিরাও ঘরে বসেই কাজ করছেন। তাঁদেরই একজন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের শাহ আলম। তিনি বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি করেন। একাই কাজ করে চলেছেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কাজের অর্ডার আছে তাঁর। তাই বিশেষ চিন্তা নেই এই কারুশিল্পীর।

পটুয়াখালীর বাউফলের বরুণ পাল মাটির সামগ্রী তৈরি করেন। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে আছে তাঁর। করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন নিয়ম মেনে। কাজ করছেন মনমতো। টাঙ্গাইলের পাতরাইলের অলংকার প্রস্তুতকারী তপন কর্মকার বা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান গ্রামের বেতের শিল্পী শ্রীনিরঞ্জনও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এই ছুটিতে বছরের অন্য সময়ের মতোই ব্যস্ত। এখন ভিন্নতা এই, এখন সহকর্মীদের সহায়তা নিচ্ছেন না বা পাচ্ছেন না। 

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বাঙালির চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখের উৎসবের সময়। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্​যাপিত হয় পাহাড়ি মানুষদের প্রধান উৎসব বৈসাবি (বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু)। এ সময় পাহাড়িদের প্রথাগত পোশাকের চাহিদা থাকে ব্যাপক। রাঙামাটির পাহাড়ি পোশাকের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেইন টেক্সটাইল উৎসব ঘিরে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে তাদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। তবে তাদের কর্মীরা বাড়িতেই এখন তৈরি করছেন পাহাড়ি পোশাক পিনন ও খাদি। বেইন টেক্সটাইলের পরিচালকদের একজন নীতা চাকমা, ‘রাঙামাটির পৌর এলাকার রাঙাপানি ও কাটাছড়ি এলাকায় অন্তত ৩০ কর্মী এখন কাজ করছেন। তাঁদের বাইরে যাওয়ার দরকার হচ্ছে না।’

দেশের নানা প্রান্তে এ কান্তে কাজে ব্যস্ত অসংখ্য পরিশ্রমী হাত। নিজের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন, দেশকেও সহায়তা করছেন। কিন্তু দেশের নীতিনির্ধারক যাঁরা, অন্তরালে থেকে কাজ করছেন তাঁরাও। এমন একজন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানালেন, গেল বুধবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও অনলাইনে চারটি ফাইল অনুমোদন করেছেন। এগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রকল্পসংক্রান্ত। মন্ত্রিসভার এ জ্যেষ্ঠ সদস্য বললেন, ‘আমি বসে নেই।’

জ্যেষ্ঠ এই মন্ত্রীর মতো মন্ত্রিসভার নবীন সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই দপ্তরের মন্ত্রী, সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের বৈঠক করেছেন গত মঙ্গলবার। সেখানে প্রচুর অর্থে ছাড়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এর মধ্যে আছে ১৮ হাজার ৫০৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪১ কোটি টাকার অনুমোদন। পাশাপাশি অনুমোদিত হয়েছে ৭ হাজার ৬২২টি বেসরকারি মাদ্রাসার প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ ২৮৭ কোটি টাকার বেশি।

উপমন্ত্রী মহিবুল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে ২০০টি ক্লাসের রেকর্ড করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য।

রেজাল্ট অনলি ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট (আরওডব্লিউই) বা কাজভিত্তিক কর্মপরিবেশ হালের ধারণা। যেখানে কর্মী কত সময় কাজ করলেন, কখন এলেন বা গেলেন, সেটা বিচার্য নয়, কাজটাই মূল কথা। ঠিক এ সময়ে যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ায় তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। এমনটাই জানালের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। তিনি বলছিলেন, ‘নিজস্ব গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’