Thank you for trying Sticky AMP!!

কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ আজ থেকে এক মাস

আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী এক মাস দেশ থেকে কোনো কাঁচা পাট রপ্তানি হবে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় গত রোববার কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সোমবার এ বিষয়ে আদেশ জারি হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটের মজুত বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে এর সংকট দেখা দেয়। দামও বেড়ে যায়। তাই দেশের পাটকলগুলো যেন পর্যাপ্ত পাট পায়, সে জন্য সাময়িকভাবে কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার আদেশ দেয় পাট মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বাজারে পাট সহজলভ্য করার জন্যই এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাজারে পাটের সংকট দেখা দিয়েছিল। কিছু পাট চোরাই পথে ভারতেও চলে যাচ্ছিল। কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিজিবির সঙ্গে বসে আমরা সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তবে এ সিদ্ধান্তে নাখোশ কাঁচা পাট রপ্তানিকারকেরা। বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমরা যেসব পাট বিভিন্ন বন্দরে পাঠিয়েছি, সেগুলো তো এখন আর যেতে পারবে না। ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ লোকসান হবে। অনেক ক্রেতাও আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।’

>পাট মন্ত্রণালয়ের আদেশ
*বিভিন্ন স্থানে মজুত বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পাটের সংকট দেখা দিয়েছে। দামও বেড়ে গেছে।
* গত অর্থবছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। এর ২৯ শতাংশই রপ্তানি হয়েছে নিম্ন মানের হিসেবে। অথচ উন্নত মানের পাট উৎপাদনকারী হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম আছে।
* দেশের পাটকলগুলোর বছরে প্রয়োজন ৫৪ লাখ বেল কাঁচা পাট। দেশের বাজারে পাট সহজলভ্য করার জন্যই এক মাস কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
মির্জা আজম, পাট প্রতিমন্ত্রী

এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই পাটের দাম চড়া। গত বছর কাঁচা পাটের দাম যেখানে ছিল প্রতি মণ ১৪০০-১৬০০ টাকা, সেখানে এ বছর মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি হয় ১৬০০-১৮০০ টাকায়। তবে এখন ভালো মানের পাট ২২০০-২৩০০ টাকা আর নিম্নমানের পাট ১৮০০-১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাটকলগুলো মনে করছে, বিভিন্ন স্থানের মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি পরিমাণে পাট মজুত করে রেখেছে। ফলে বাজারে পাটের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে।
পাটের চড়া বাজার দেখে গত আগস্টে পাটকলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি আদেশ জারি করে পাট অধিদপ্তর। ওই আদেশ অনুযায়ী, আড়তদারেরা এক হাজার মণের বেশি পাট এক মাসের বেশি সময় মজুত রাখতে পারবেন না। আদেশে লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাঁচা পাট কেনা-বেচা ও মজুত না করা এবং ভেজা পাট কেনা-বেচা বন্ধ করা ও বাজারে পাটের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়।
কিন্তু সরকারের এই আদেশ তেমন কার্যকর হয়নি। যার কারণে বাজারে পাটের সংকট কাটেনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট মাসে কাঁচা পাট রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)। তাও সম্ভব না হলে বাংলা তোষা পাট রিজেকশন (বিটিআর) এবং বাংলা সাদা পাট রিজেকশন (বিডব্লিউআর) রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবিও জানায় সংগঠনটি। এই বিটিআর ও বিডব্লিউআর হলো নিম্নমানের পাট।
পাটকলমালিকদের সংগঠনগুলো বলছে, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এ বছর পাটের ফলন কম হয়েছে। দেশে পাটপণ্য উৎপাদনে বছরে ৫৪ লাখ বেল কাঁচা পাটের প্রয়োজন। আর কাঁচা পাট রপ্তানি হয় ১০ লাখ বেল। সব মিলিয়ে দেশের পাটশিল্পের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন ৬৪ লাখ বেল পাটের। এর মধ্যে বিজেএসএর লাগে ৩৫ লাখ বেল, বিজেএমসি বা সরকারি পাটকলগুলোর লাগে ১০ লাখ বেল এবং বিজেএমএর মানে বেসরকারি পাটকলগুলোর লাগে ৯ লাখ বেল পাট।
বিজেএসএর হিসাবমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশ থেকে ৯ লাখ ২৪ হাজার বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়। এর মধ্যে বিডব্লিউআর গ্রেডে ৪ হাজার ৩২৩ বেল এবং বিটিআর গ্রেডে ২ লাখ ৬০ হাজার বেল পাট রপ্তানি হয়। অর্থাৎ দেশ থেকে যত পাট রপ্তানি হয়, তার প্রায় ২৯ শতাংশই নিম্ন মানের হিসেবে রপ্তানি হয়েছে। অথচ, উন্নত মানের পাট উৎপাদনকারী হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সে যুক্তিতেই বিজেএসএ বিটিআর ও বিডব্লিউআরের রপ্তানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়।
কাঁচা পাটের রপ্তানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেএসএর সভাপতি আহমেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সিদ্ধান্তের কারণে এক দিনেই বাজারে তার প্রভাব পড়ে না। তাই আরও ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে পাটের অভাবে দেশের পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, এখন আর তেমনটা হবে না।