Thank you for trying Sticky AMP!!

কুরিয়ার সেবা খাতের অনেক বড় হওয়ার সুযোগ রয়েছে

হাফিজুর রহমান

একটা সময় ছিল যখন ডাকঘরের কুরিয়ার সেবার ওপরই মানুষকে নির্ভর করতে হতো। বেসরকারি খাত কুরিয়ার সেবায় মনোযোগী হওয়ার পর থেকে একদিকে বাজারটি বড় হয়েছে, অন্যদিকে মানুষের সেবা পাওয়া সহজ হয়েছে। ঘরে বসে গ্রাহকেরা দিনে দিনেই তাঁদের পণ্য বা সেবা পাচ্ছেন। বছর বছর এ খাতের প্রতি গ্রাহকদের তাই আস্থাও বেড়েছে।

সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে কোভিডের মধ্যেও কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের গাড়ি বা কাভার্ড ভ্যান চালানোর সুযোগ দিয়েছে। অর্থাৎ সরকার বিধিনিষেধের বাইরে রেখেছে কুরিয়ারকে। তবে দুঃখেরও ব্যাপার আছে। যে খাতের নামের মধ্যেই আছে ‘কুরিয়ার সার্ভিস’ বা কুরিয়ার সেবা, বাস্তবে সরকারের কাছে তা সেবা খাত হিসেবে স্বীকৃত নয়। স্বীকৃতি চেয়ে সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেই যাচ্ছি।

এ খাতে অন্য সমস্যাও আছে। কার্যকর কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান দেড় শর মতো থাকলেও লাইসেন্স বা নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করছে ৭০ থেকে ৭৫টি। এর পেছনেও কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের তুলনায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ও নবায়ন মাশুল কয়েক গুণ বেশি। আবার প্রতিটি ডকুমেন্টের বিপরীতে দেশীয় কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ থেকে ১৫ পয়সা করে ভর্তুকি মাশুল দিতে হয় সরকারকে। অথচ প্রতি ডকুমেন্টে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নেয় ১০ থেকে ২৫ টাকা। আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নেয় গড়ে দুই হাজার টাকা।

লাইসেন্স ছাড়া কারা ব্যবসা করছে, সে ব্যাপারে কোনো তদারকিও নেই। কারও কারও বিরুদ্ধে মাদক বহনেরও অভিযোগ আছে। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে এবং তা অন্তত ছয় মাস সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকলে এ বিষয়টা রোধ হতে পারে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। কী পণ্য, কোথায় যাচ্ছে, তা জানার জন্য স্ক্যানার বসানোর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এ জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় করমুক্তভাবে স্ক্যানার আনার সুযোগ দিতে পারে সরকার।

কুরিয়ার সেবা খাতটির অনেক বড় হওয়ার সুযোগ আছে। একে পদ্ধতিগতভাবে চলতে দিতে হবে, যেহেতু এখন অনলাইনের যুগ এবং ই-কমার্স ব্যবসা বড় হচ্ছে। অথচ নতুন বিপদের কথা শোনা যাচ্ছে। কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন লাইসেন্স দেয় মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, লাইসেন্স নিতে গেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবের অনুমোদন নিতে হবে। এ যেন এক উল্টো যাত্রার আভাসধ্বনি। এটা হলে লাইসেন্স নেওয়ায় আরও স্থবিরতা নেমে আসবে। এখন যারা লাইসেন্স নিচ্ছে না, তাদের ধরার সুযোগ কর্তৃপক্ষের আছে। লোকবল দিয়ে কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করা দরকার।

মোটকথা, কুরিয়ার সেবা খাতটি অনেক সম্ভাবনাময়। সরকারের কিছু নীতিসহায়তা পাওয়া গেলে খাতটি অনেক বেশি সুশৃঙ্খল হবে এবং আয়কর ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) দিক থেকে সরকারও অনেক লাভবান হবে।

হাফিজুর রহমান : সভাপতি, কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএসএবি)