Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্ষতি মোকাবিলায় ৬০০০ কোটি টাকা

ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। সড়ক সংস্কারের জন্য চলতি অর্থবছর থেকে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকা করে পাওয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে পরপর দুটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দেশের অনেক রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় দেশজুড়ে অনেক রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে সেতু ও কালভার্ট। দ্রুত রাস্তাঘাট সংস্কারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্থানীয় ব্যক্তিরা দাবিও তুলেছেন। এমন বাস্তবতায় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্টের তালিকা তৈরি করে সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে। সড়ক সংস্কারের জন্য চলতি অর্থবছর থেকে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকা করে পাওয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় এলজিইডি। আগামী মঙ্গলবার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেতে পারে বলে আভাস মিলেছে পরিকল্পনা কমিশন থেকে। কারণ, প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য জনপ্রতিনিধিদের যেমন চাপ আছে, তেমনি সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও চান, দ্রুত সড়ক, সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হোক। তবে দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকা করে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে খোদ এলজিইডির মধ্যেই।

একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এলজিইডির অধীনে এখন সবচেয়ে বড় প্রকল্প প্রত্যেক সাংসদকে তাঁদের নিজ নিজ এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিবছর পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়ার প্রকল্পটিতে চাহিদামাফিক টাকা দিতে পারছে না সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর ২০ মে উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের তাণ্ডবে যোগাযোগব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২০০টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, করোনার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। সরকারের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ করতে হয়েছে।

এমন বাস্তবতায় করোনার সময়ে আম্পান ও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নেওয়া প্রকল্পটিতে পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই প্রকল্পের চলমান অবস্থায় যদি আবার বন্যা বা আরেকটি ঘূর্ণিঝড় হয়, তখন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কি করা হবে, তা নিয়েও চিন্তা আছে সরকারের মধ্যে। ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও বেড়ে যাবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর ২০ মে উপকূলীয় জেলাগুলোর ওপর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের তাণ্ডবে যোগাযোগব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২০০টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ঠিক দেড় মাস পর ২৭ জুন থেকে শুরু হয় বন্যা। ১৯৯৮ সালের পর এবারের বন্যাকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা বলে অভিহিত করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। টানা ৪৩ দিন পানির নিচে ছিল দেশের ৩৩টি জেলার ১৫৪ উপজেলা। দীর্ঘস্থায়ী ওই বন্যায় অনেক রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, এবার অতিবৃষ্টিতে অনেক জেলার রাস্তাঘাটে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দুটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সারা দেশ থেকে

জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্টের তথ্য সংগ্রহ করে এলজিইডি। সেই তথ্য–উপাত্ত নিয়েই ঘূর্ণিঝড় আম্পান, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন শিরোনামের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা পর্যায়ে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে ৩৫৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে ২৬৭ কিলোমিটার।

জানতে চাইলে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরপর দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারা দেশেই রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে সরকারের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টের তালিকা তৈরি করেছি। যে জায়গায় যত বেশি ক্ষতি হয়েছে, সে জায়গায় বরাদ্দ বেশি পাচ্ছে। প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা তিন বছরেই পাবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম জানান, প্রতিবছরই আমাদের চাহিদার সঙ্গে টাকা পাওয়ার ঘাটতি থাকেই। এর মধ্য দিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।’

এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা পর্যায়ে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে ৩৫৪ কিলোমিটার। ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক পুনর্বাসন করা হবে ২৬৭ কিলোমিটার। গ্রামপর্যায়ে সড়ক সংস্কার করা হবে ১৮৯ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে ১ হাজার ২১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পুনর্নির্মাণ করা হবে ২৪৬ মিটার। কালভার্ট পুনর্নির্মাণ করা হবে ১২৮ মিটার।

অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা সড়ক সংস্কার করা হবে ১ হাজার ২২৭ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার। আর গ্রাম সড়ক উন্নয়ন করা হবে ৬৯৬ কিলোমিটার। অতিবর্ষণে সারা দেশে যেসব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোও সংস্কার করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।

এর মধ্যে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উপজেলা পর্যায়ে ৮০৭ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৯০১ কিলোমিটার, গ্রামপর্যায়ে ৬৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। ফলে বলা যেতে পারে, প্রায় সব জেলার সাংসদই নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারে আবারও বড় অঙ্কের টাকা পেতে যাচ্ছেন।

মাত্র পাঁচ মাস আগে গত ২১ জুন একনেক সভায় প্রত্যেক সাংসদ নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে ৪ বছরে মোট ২০ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নে একটি প্রকল্প পেয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচিত সাংসদেরা এই টাকা পাবেন। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর প্রত্যেক সাংসদকে নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্প এখনো চলছে। যদিও এলজিইডি বলছে, রাস্তা সংস্কার করবে তারা। সাংসদেরা শুধু রাস্তাঘাটের নাম দেন। ফলে সাংসদদের টাকা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।