Thank you for trying Sticky AMP!!

গরুর মাংসের দাম নাগালে আসছে না

ঢাকায় এক কেজি গরুর মাংসের দাম এখন বাজার ও গরুভেদে ৫৩০ থেকে ৬০০ টাকা। এটি একজন রিকশাচালকের পুরো দিন খাটুনির পর পাওয়া অর্থের সমান। একজন পোশাকশ্রমিকের দুই দিনের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে কেনা যায় এক কেজি মাংস।

চড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে এখন আর তেমন গরুর মাংস কেনা হয় না। মাঝারি আয়ের চাকরিজীবীদের রান্নাঘরে গরুর মাংসের প্রবেশও মাঝেমধ্যে ঘটে। দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর মাংস পাতে ওঠে না।

অথচ একটা সময় বাজারে বেশ সস্তায় গরুর মাংস পাওয়া যেত। সীমিত আয়ের মানুষেরা নিয়মিত কিনতে পারতেন। তখন বরং দেশি মুরগির মাংসের দামই বেশি ছিল। যেমন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে এক কেজি গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। ওই সময় মাঝারি আকারের দেশি মুরগির প্রতি কেজি দাম ছিল ৩১৭ টাকা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাবে, দেশি মুরগির গড় দাম ৩৫২ টাকায় ওঠে, আর গরুর মাংস মুরগিকে ছাড়িয়ে ৫২৭ টাকায় ঠেকে।

অবশ্য ক্যাবের হিসাবে, গত অক্টোবরে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ও কক মুরগি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। গরুর মাংসের মতো খাসির মাংসের দামও চড়া। আসল খাসির মাংসের কেজি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, আর ছাগলের মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।

ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর গত চার বছরে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার হয়েছে। তরুণদের অনেকে বড় খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। সরকার দাবি করছে, নিজেদের গরুতেই ঈদুল আজহার বিপুল চাহিদা মিটছে। তারপরও গরুর মাংসের দাম কমেনি।

ঢাকার সেগুনবাগিচা বাজারে গত মঙ্গলবার প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৬০ টাকা দর চাইছিলেন বিক্রেতারা। দাম জিজ্ঞাসা করেই হেঁটে যাচ্ছিলেন গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তি, যিনি গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্রে চাকরি করেন। থামিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর মেয়ের গরুর মাংস খুব পছন্দ। নিতে বলে। তাই এক-দেড় মাস পরপর এক কেজি কেনেন। তিনি আরও বলেন, ‘গরুর মাথার মাংস একসময় ৮০ টাকা কেজি ছিল। এখন সেটা ৩২০ টাকা।’

মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের বাজারে দেখা গেল, গরুর ভুঁড়ি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে; যা এ সময় মানুষ তেমন একটা কিনতই না। চারটি পায়া চাওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। শুধু কলিজার কেজি অবশ্য মাংসের চেয়ে বেশি, ৬০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

>সীমিত আয়ের মানুষের গরুর মাংস কেনার সাধ্য নেই বললেই চলে। যদিও দেশে গরুর মাংসের উৎপাদন বাড়ছে।

শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের পেছন দিকে খাবার হোটেল চালান সাবিনা বেগম। তাঁর ঝুপড়ি হোটেলেও ছোট এক বাটি গরুর মাংস ১০০ টাকা। সাবিনা বলেন, গরুর মাংস বিক্রি করে লাভ কম। দাম বেশি বলে বিক্রিও কম। সাবিনার হোটেলে বিভিন্ন ধরনের মাছ ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাটি দরে বিক্রি হয়। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখের মতো। ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হিসাব দিয়েছিল, তখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ছিল।

গরুর মাংসের দাম এত বেশি কেন, জানতে চাইলে ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. শাহ ইমরান বলেন, পশুখাদ্যের দাম খুবই চড়া। বাণিজ্যিকভাবে পশুখাদ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নাগালে না আনলে খামারে গরু পালন লাভজনক হবে না। তিনি বলেন, গরুর খামারের মতো একটি কৃষিভিত্তিক খাতে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। কৃষক যে দামে গরু বিক্রি করেন, তার চেয়ে অনেক চড়া দামে মাংস বিক্রি হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভোক্তা অধিকারকর্মীরা মনে করেন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থ রক্ষা করে সরকারের উচিত দাম কমাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেইন বলেন, গরুর মাংসের দাম কীভাবে নাগালে আনা যায়, সেই পর্যালোচনা ও পদক্ষেপ দরকার।