Thank you for trying Sticky AMP!!

গাড়ি চলছে উল্টো পথে

রয়টার্স : ফাইল ছবি

এক বছর ধরেই টালমাটাল বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট), ভারতের অর্থনৈতিক শ্লথগতির চাপ পড়েছে সারা বিশ্বের শিল্প খাতে। গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই খাত। আর শিল্প উৎপাদনের এই মন্দা মূলত বিশ্ব অর্থনীতিকে নিচের দিকে টানছে, তৈরি হয়েছে প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা, আর বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুভব করছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাড়না। 

শিল্প খাতের এই মন্দাদশার মূলে আছে গাড়িশিল্পের শ্লথগতি। গত সোমবার প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আগস্টে বিশ্বব্যাপী গাড়ির উৎপাদন প্রায় রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। আসলে চলতি বছরের শুরু থেকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখতে শুরু করে গাড়ির বাজার। দেখা যাক কোন দেশের কী অবস্থা। 

চীন: পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গাড়ি তৈরি হয় চীনে। চীনের তৈরি গাড়ি বিশ্ববাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ দখলে রেখেছে। ২০১৮ সালে দেশটি প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ গাড়ি তৈরি করে। তবে চীনের এই সাম্রাজ্যেও ফাটল ধরেছে। গত আগস্ট পর্যন্ত চীনে টানা ১৪ মাস ধরে কমেছে গাড়ির বিক্রি। চায়নিজ অ্যাসোসিয়েশন অব অটো ম্যানুফ্যাকচারার্সের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে গাড়ির বাজার সংকুচিত হয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি কমেছে ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের ভোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি করছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, গাড়ির বাজারের এই ধস সাময়িক নয়। অল্প সময়ের মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি আগামী তিন বছর নেতিবাচক থাকতে পারে বিক্রি। 

যুক্তরাষ্ট্র: এক বছর ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য লড়াই বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি করেছে। যার উত্তাপ থেকে রেহাই পাচ্ছে না খোদ যুক্তরাষ্ট্রও। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে গাড়ি বিক্রি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। গণমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দেশটিতে বিক্রি হয় ১ কোটি ৭৩ লাখ গাড়ি। তবে এ বছর বিক্রি কমে ১ কোটি ৬৯ লাখ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০২০ সালে তা আরও কমে ১ কোটি ৬৩ লাখ ও ২০২১ সাল নাগাদ তা দেড় কোটিতে উত্তীর্ণ হতে পারে। জেনারেল মোটরস, ফোর্ডের মতো গাড়ি তৈরির কোম্পানিগুলো চীনে তাদের বিক্রি কমে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। 

যুক্তরাজ্য: ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষে গণভোটের পর থেকেই যুক্তরাজ্যের গাড়ি নির্মাতারা সাবধান হয়ে যান। অবশ্য এর আগে থেকেই বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ডিজেল বা কোনো ধরনের জ্বালানিবিহীন পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির ধারণা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকে। এর মধ্যে রাইড বা কার শেয়ারিংও গাড়ি কোম্পানিগুলোকে মালিকানা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এর মধ্যেই আবার বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে চীন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারগুলোতে বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের কারখানা বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কর্মসংস্থানের সংকটও তৈরি হচ্ছে দেশটিতে। 

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইতে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড জানায়, আগামী বছর নাগাদ যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে অবস্থিত নিজেদের গাড়ি উৎপাদনকারী প্ল্যান্টটি বন্ধ করে দেবে তারা। এটি বন্ধ হলে চাকরি হারাবে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কর্মী। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সুইনডন শহরে নিজেদের গাড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হোন্ডা। 

ভারত: ভারতের অর্থনীতিতে চলমান মন্দার ধাক্কা দেশটির গাড়িশিল্পেও এসে লেগেছে। গত আগস্টে ভারতে গাড়ি বিক্রির যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তা গত দুই দশকে সর্বনিম্ন। ২০১৮ সালের আগস্টে ভারতে মোটরগাড়ি বিক্রির মোট সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৪০১টি। চলতি বছর একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০টিতে। সেই হিসাবে গত আগস্টে গাড়ি বিক্রি কমেছে ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে গাড়িশিল্পে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে ভারতে। অর্থনীতির অধোগমনের জন্য ‘ওলা-উবার ও নতুন প্রজন্মের মানসিকতা’ দায়ী বলে মনে করছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। 

জাপান: গাড়িশিল্পের সংকটের ছায়া পড়েছে জাপানেও। আসলে জাপানের মোটরগাড়িশিল্প বিশ্বের ট্রেন্ড পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি এবং গত কয়েক দশকে কোনো বড় সংস্কার হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে, তেমনি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার চাহিদা বাড়ছে। কারণ, এই নির্গমনের প্রধান কারণ অটোমোবাইল। এই প্রবণতার কারণে যুক্তরাজ্যের মতো জাপানের অটোমোবাইল খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। আইএইচএস মার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে জাপানে আগের বছরের তুলনায় গাড়ি বিক্রি কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। টয়োটা, নিশান, মিতসুবিশি আর হোন্ডা বিশ্বখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড। 

জার্মানি: জার্মান অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে গাড়িশিল্প। মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফক্সওয়াগন, অডি এবং পোর্শের মতো নামী ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর নির্মাতা জার্মানিও ভালো নেই। চলতি বছরের প্রথমার্ধে গাড়ির উৎপাদন কমেছে ১২ শতাংশ। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে বিক্রি কমে যাওয়ায় ভুগেছে মার্সিডিজ বেঞ্জ। বছরের প্রথমার্ধে সাড়ে ৪ শতাংশ কম গাড়ি বিক্রি করেছে অডি। 

ইতালি: ইউরোপে গাড়ির বাজারে ইতালির অবস্থান চতুর্থ, জার্মানির পরেই। ভালো নেই ইতালির গাড়ির বাজারও। বিভিন্ন পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালে গাড়ির বাজার ৩ শতাংশ কমবে। গত বছর ইতালির অন্যতম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিয়াট যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার গাড়ি বিক্রি করে। অথচ ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তারা ৪৬ হাজার গাড়ি বিক্রি করেছিল। গাড়ির জগতের এই স্টাইল আইকনের বিক্রি এখন অনেক কমে গেছে। মূলত ছোট আকারের গাড়ির চাহিদা কমে যাওয়া এর কারণ।