Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রাম বন্দর এখন গুদাম

প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় ১১ লাখ বর্গমিটার চত্বরে এখন আর কোনো জায়গা খালি নেই। সবখানেই সারি সারি কনটেইনার। নতুন করে বন্দরের অভ্যন্তরে সড়কের আশপাশ, গাড়ির ছাউনি, মূল জেটির কাছাকাছিও রাখা হয়েছে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার। একই রকম অবস্থা সাগরে কনটেইনারবাহী জাহাজেও।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বন্দর ছাড়া সব সংস্থার কার্যক্রম টানা ২৭ দিন সীমিত করায় পণ্য খালাস স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এতে ৯৮ শতাংশ কনটেইনার পরিবহনকারী এই বন্দর কার্যত গুদামে পরিণত হয়েছে। পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলে এই জট কয়েক মাসেও দূর হবে না।

এখন বন্দর চত্বরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার পড়ে আছে ৪৬ হাজার ৩২৯টি, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার বেশি। আর সাগরে ৩৩টি জাহাজে আছে প্রায় ৪০ হাজার কনটেইনার। বন্দরের ইতিহাসে এমন অবস্থা কখনো হয়নি।

>বন্দর চত্বরে পড়ে আছে ৪৬,৩২৯টি কনটেইনার, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার বেশি
বন্দরের ইতিহাসে এমন অবস্থা হয়নি।
গ্রাফিক্স ইমেজ হিসেবে ভেতরে দেবেন।

জটের কারণে এখন কনটেইনারে আমদানি হওয়া কোনো জরুরি পণ্য চাইলেই খালাস করা যাবে না। কারণ, এখন যে জাহাজটি বন্দর জলসীমায় আসবে, তা জেটিতে ভিড়তে সময় লাগবে অন্তত ১২ দিন। জটের প্রভাবে জাহাজ কোম্পানিগুলোর যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট ‘এশিয়ান ফিডার ডিসকাশন গ্রুপ’।

বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন আহমেদ সাহেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বন্দরগুলো জটে পড়লেও চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জট হয়নি কোথাও। কনটেইনার খালাস বা অন্যত্র সরিয়ে না নিলে এই বন্দর গুদামই থেকে যাবে।

প্রসঙ্গত, দেশের রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। সিমেন্ট, ইস্পাতসহ কয়েকটি ছাড়া সব শিল্পকারখানার কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি হয় কনটেইনারে। অবশ্য কনটেইনারবিহীন পণ্যে জট নেই, যেগুলো বহির্নোঙরে খালাস হয়।

জটের নেপথ্যে

জটের মূল কারণ হলো সাধারণ ছুটির সময় সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীরা যেমন পণ্য খালাস করতে পারেননি, তেমনি রাজস্ব বোর্ডও বাণিজ্যিক পণ্য খালাসে ২৭ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ধাপে ধাপে তা তুলে নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

যেমন করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটির শুরুতে পণ্য শুল্কায়ন কার্যক্রম সীমিত করার নির্দেশনা দেয় রাজস্ব বোর্ড। আবার পণ্য খালাসের অনুমোদন ও পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোও সেবার আওতা সীমিত করে। এতে বন্দর থেকে পণ্য খালাস কমে যায়। বন্দরে পণ্যের স্তূপ জমতে থাকে।

জটের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পেরে রাজস্ব বোর্ডের কাছে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানায়। যেমন বন্দর থেকে ডিপোতে পণ্য সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন এবং বাণিজ্যিক পণ্য শুল্কায়ন চালুর অনুমোদন প্রদান।

এরপর রাজস্ব বোর্ড ৬ ধরনের ৭৩০টি পণ্য বন্দর থেকে ডিপোতে নিয়ে খালাস নেওয়ার আদেশ জারি করে। এই আদেশ জারির পাঁচ দিনে গতকাল বুধবার পর্যন্ত একটি কনটেইনারও সরানো যায়নি। সবশেষ গতকাল প্রায় ২৭ দিন পর বাণিজ্যিক পণ্য শুল্কায়ন ও খালাসে বাধা তুলে দেয় রাজস্ব বোর্ড। তত দিনে বন্দরে বাণিজ্যিক পণ্যের স্তূপ জমে গেছে।

কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম প্রথম আলোকে জানান, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন সব ধরনের পণ্য শুল্কায়ন হচ্ছে।

কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর কার্যক্রম অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা করা উচিত। বন্দরের সঙ্গে পণ্য খালাসে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এর আওতায় আনা দরকার। অবশ্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে এসব পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে বন্দর দিয়ে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখা যায়।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্য খালাস করতে পারেন, সে জন্য যেসব জায়গায় সমস্যা রয়েছে, তা সমাধান করতে হবে। এর পাশাপাশি শিল্পকারখানার কাঁচামাল ডিপোতে সরিয়ে নেওয়ার জন্য রাজস্ব বোর্ডকে অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।

বন্দর জেটি পরিচালনাকারীরা জানান, বন্দর চত্বর থেকে কনটেইনার খুলে পণ্য খালাসের যে পুরোনো পদ্ধতি রয়েছে, তা তুলে দেওয়া দরকার। এটি বিশ্বের কোথাও নেই। জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর পর তা বন্দরের বাইরে সংরক্ষিত এলাকায় নেওয়ার উদ্যোগ নিতে রাজস্ব বোর্ডকে ভাবতে হবে।

জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ হচ্ছে। তবে পণ্য খালাসের হার না বাড়লে বা ডিপোতে সরিয়ে নেওয়া না হলে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।