Thank you for trying Sticky AMP!!

চাপ কমেছে পরিকল্পনামন্ত্রীর!

প্রতিটি রমজান মাসে নিজের নির্বাচনী এলাকায় গরিব মানুষের মধ্যে কাপড় বিতরণ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ নিয়ে আগে যে চাপে থাকতেন, এখন সেই চাপ আর অনুভব করেন না বলে জানালেন তিনি। কারণ, দারিদ্র্য কমেছে। তাতেই কিছুটা চাপমুক্ত মন্ত্রী।

কুমিল্লার দুটি নির্বাচনী এলাকার ১০ লাখ মানুষের জনপ্রতিনিধি মুস্তফা কামাল।তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার একটি উপজেলায় আগে রমজানে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৭ হাজার কাপড় লাগত।এখন সেটি কমে নেমে এসেছে ১৪ হাজারে। এমনকি এলাকায় যখন ইফতারের আয়োজন করি, সেখানেও চাপটা কমে আসছে।’

এভাবেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসা ও উন্নয়নের একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এই মন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভাকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি।

গত বুধবার প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায় দরিদ্র মানুষের সামজিক সুরক্ষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের এক হিসাবের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, দেশের মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৬৪ শতাংশ মানুষ রাষ্ট্রীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর একটিরও সুবিধা পায় না।   

ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই মন্ত্রী দেশের দারিদ্র্য-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেন। অবশ্য এ সময় মন্ত্রী স্বীকার করেন, দারিদ্র্য নিরসনে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়, সেগুলোর কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যাদের জন্য প্রকল্প বা প্রকল্প-সহায়তা, যাদের পাওয়ার কথা, তারা হয়তো সব সময় ঠিকমতো পান না। অন্যথায় দরিদ্রের সংখ্যা হয়তো আরও কমত।

নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাপড় ও ইফতার বিতরণের ক্ষেত্রে চাপ কমার মাধ্যমে দারিদ্র্য কমে যাওয়ার যে উদাহরণ মন্ত্রী দিলেন, সেটি সারা দেশের দারিদ্র্য কমার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারিদ্র্য কমেছে এ কথা সত্য। প্রশ্ন হচ্ছে, যে মাত্রায় কমেছে, সেটি যথাযথ কি না বা সব এলাকায় সমভাবে কমেছে কি না? এগুলো গবেষণা ও পরিসংখ্যানের বিষয়। সার্বিকভাবে এখনো হতদরিদ্রের যে সংখ্যা, সেটি অনেক।’

মন্ত্রীর এলাকার দারিদ্র্য কমার উদাহরণটি অবহিত করে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জায়েদ বখত বলেন, ‘হয়তো উনার (মন্ত্রীর) এলাকায় দারিদ্র্য কমেছে। অথবা অভিবাসনজনিত কারণেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকার দারিদ্র্য কমার হার জানতে হলে সেই এলাকার অভিবাসনের হারটিকেও বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ কাজের সন্ধানে দরিদ্র ও ভাসমান মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন। যে গরিব মানুষগুলো জীবনের প্রয়োজনে স্থান ত্যাগ করছেন, তাঁদের অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। কিন্তু স্থান বদলের কারণে হয়তো ওই এলাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে।’

এদিকে ওই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘সাংসদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমি বিভিন্ন জেলার তথ্য সংগ্রহ করি। সততার সঙ্গে বলছি, আগের মতো এখন ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড নিয়ে কাড়াকাড়ি নেই। আমাকে দিতে হবে, আমাকে দিতে হবে—এ রকম এখন আর পাওয়া যায় না। জাতীয় প্রবৃদ্ধির আড়াই শতাংশ এখন আমরা দারিদ্র্য নিরসন প্রকল্পে ব্যয় করি।’

মন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব। এরপর কোনোভাবে দেশে দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আনুষ্ঠানিক (ফরমাল) খাতে এসব চাকরি হবে।

মন্ত্রীর এমন দাবির বাস্তবতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারিদ্র্য একটি বড় বিষয়। কোন ধরনের দারিদ্র্য নিরসনের কথা মন্ত্রী বলেছেন, সেটি আমরা জানি না। তবে দেশে চরম দরিদ্র যে জনগোষ্ঠী আছে, সঠিক পরিকল্পনা বা কৌশল নিয়ে এগিয়ে গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসা যাবে।’

কিন্তু বর্তমান কৌশলে সেটি সম্ভব হবে না উল্লেখ করে জিল্লুর আরও বলেন, দেশকে চরম দরিদ্রমুক্ত করতে হলে আগামী দিনে নগর দারিদ্র্য দূরীকরণসহ দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ জন্য নতুন করে কর্মকৌশল ঠিক করতে হবে। এই মুহূর্তে নগর দারিদ্র্য দূরীকরণের সঠিক কোনো কৌশল নেই।

আনুষ্ঠানিক খাতে পাঁচ বছরে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের বিষয়ে জিল্লুর বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন পদে বড় ধরনের শূন্যতা রয়েছে। সেখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব। কিন্তু এসব পদে লোক নেওয়া হবে, এমন কোনো ভরসা আমরা পাচ্ছি না। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক খাত বলতে মন্ত্রী কোন খাতকে বুঝিয়েছেন, সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে আমি মনে করি, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত—এটিও একধরনের বিভাজন।’

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মন্ত্রী সদ্যবিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরেন। তাতে তিনি বছর শেষে ৮৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নের কথা জানান। সেই সঙ্গে এও বলেন, সব মন্ত্রণালয় থেকে এখনো চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের আংশিক হিসাব পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রাপ্তির পর এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে অভিমত মন্ত্রীর। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।