Thank you for trying Sticky AMP!!

চামড়ার রঙে বিশ্বসেরা অ্যাপেক্স

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার রপ্তানির জন্য জুতার নকশা করে নিজেরাই। তাদের কারখানায় নকশা করার জন্য রয়েছে বড় একটি নকশাকেন্দ্র, যার কার্যালয় আছে ইতালিতেও। দেশের নকশা কেন্দ্রে রপ্তানির জন্য তৈরি জুতা দেখাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির দুজন কর্মী। সম্প্রতি গাজীপুরে। ছবি: প্রথম আলো

চামড়ার বিশ্বসেরা রঙের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের একটি রং। জার্মানির বার্লিনে গত ১৬ অক্টোবর এ নিয়ে এক বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাংলাদেশি কারখানা অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের তৈরি একটি রং সেরা ২৭টি রঙের একটি বলে বিবেচিত হয়েছে। অ্যাপেক্সের রংসহ বাকি রংগুলো ২০২০ সালের গ্রীষ্ম ও বসন্তে চামড়াজাত পণ্য ও পোশাকের সেরা ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হবে।

বার্লিনে ওই রং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে মোডইউরোপ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ, যাদের কাজ হলো ফ্যাশনের প্রবণতাগুলো বিশ্লেষণ করা এবং নতুন প্রবণতা তৈরি করা। তারা প্রতি দুই বছর পরপর ‘কালার ক্লাব কনফারেন্স’ নামের একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন দেশের সেরা ট্যানারি, জুতা ও ব্যাগ উৎপাদনকারী এবং নকশাকারীরা অংশ নেন। এ বছরের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫-১৬ অক্টোবর।

মোডইউরোপ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি জার্মান শু ইনস্টিটিউটের ফ্যাশনবিষয়ক সহযোগী। এবার তাদের সম্মেলনে বিশ্বসেরা ট্যানারি, জুতা উৎপাদক ও বস্ত্র উৎপাদকেরা ৭৫০টি চামড়া ও বস্ত্রের রং নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। অ্যাপেক্স জানায়, তারা পাঠিয়েছিল মোট ৮৫টি রং। এর মধ্যে সবুজ একটি রং ২৭টি সেরা রঙের তালিকায় স্থান পায়। অ্যাপেক্সের তৈরি রংটি কচি চা–পাতার মতো। তাদের ট্যানারিতে সেই রংটিকেই চামড়ায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুতার ফ্যাশন তৈরি হয় জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশি কারখানাগুলো মূলত ফ্যাশন অনুসরণ করে। ক্রেতারা নকশা ও রং দেয়, দেশে শুধু শ্রম দিয়ে সেগুলো তৈরি হয়। অ্যাপেক্সের রং সেরার তালিকায় আসার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো যে আমরাও ফ্যাশন সৃষ্টি করতে পারি।’ তিনি বলেন, ২০২০ সালের গ্রীষ্ম ও বসন্তে কী ফ্যাশন হবে, তা নিয়ে এখন কাজ করছে গুচি, প্রাডার মতো দামি ব্র্যান্ডগুলো। এই ফ্যাশনে মোডইউরোপ ওপিনিয়ন ফরমার বা মতমোড়লের ভূমিকা পালন করে। এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি কোম্পানিকে মোডইউরোপে অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রথমবার অংশ নিয়েই অ্যাপেক্সের রং সেরার তালিকায় স্থান পায়।  

চা–পাতার রং ছাড়াও পাটের সোনালি রং, বাংলাদেশের পতাকা রং, কাঁসার তৈজসপত্রের রং চামড়ায় ফুটিয়ে তুলে প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিল অ্যাপেক্স। মোডইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন মার্টিন উতকি অ্যাপেক্সকে খবরটি জানিয়ে ই–মেইলে লিখেছেন, অ্যাপেক্সের চামড়া ও রং সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। অংশগ্রহণকারীরা সবাই অ্যাপেক্সের রঙে অভিভূত।

অ্যাপেক্সের ট্যানারি ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও প্রকৃতি থেকে রংগুলো বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর সেটা চামড়ায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের একমাত্র ট্যানারি, যেটি আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) নিরীক্ষায় গোল্ড সার্টিফিকেট বা সনদ পেয়েছে। এর মানে হলো, অ্যাপেক্স পরিবেশ রক্ষায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে। এলডব্লিউজি সনদ না থাকলে বড় ব্র্যান্ডের ক্রেতারা পণ্য কেনে না। গত ২৩ অক্টোবর অ্যাপেক্সের কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা ১৩৫টির বেশি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করেন।

মার্কিন বিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বস–এর চোখে অ্যাপেক্স ‘শু মেকার টু দ্য ওয়ার্ল্ড (বিশ্বের জন্য জুতা প্রস্তুতকারী)। ২০১৫ সালে তারা অ্যাপেক্সকে নিয়ে এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অ্যাপেক্সের অনন্য দিকটি হলো, তারা নিজেরাই জুতার নকশা করে। ইউরোপের ফ্যাশন প্রবণতা ধরতে পণ্য উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে অ্যাপেক্সের, যার কার্যালয় আছে ইতালিতেও। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তাদের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের কারখানা গাজীপুরে।  রপ্তানিমুখী কারখানায় প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াকৃত ওয়েট ব্লু চামড়া আমদানি করে পণ্য তৈরির উপযোগী চামড়া উৎপাদন করা হয়। অ্যাপেক্সের ট্যানারি ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন করে যে পানি বাইরে ফেলা হয়, তা দেশীয় পরিবেশ আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পরিশোধিত। বিভিন্ন ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কারখানা নিরীক্ষা করায়।

অ্যাপেক্সের কারখানার প্রাঙ্গণেই বর্জ্য পরিশোধনাগার। দুর্গন্ধযুক্ত ও কালো বর্জ্য পরিশোধনাগারে পরিশোধিত হয়ে স্বচ্ছ পানিতে রূপ নিচ্ছে। সেই পানিতে মাছও বাস করে। অ্যাপেক্সের কর্মীরা মাছ ধরেও দেখালেন। বড় তেলাপিয়ার পাশাপাশি ছোট ছোট পোনাও রয়েছে। সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পানি ভালো বলেই মাছের পোনাও বাঁচতে পারছে।