Thank you for trying Sticky AMP!!

ছকবাঁধা বাজেটের সংস্কার চান বদিউল

বাজেট ২০১৯-২০ নিয়ে সুজনের নাগরিক ভাবনা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২১ জুন। ছবি: হাসান রাজা

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বাজেট ছকবাঁধা হয়ে পড়েছে। এর কাঠামোগত সংস্কার দরকার। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন ‘বাজেট ২০১৯-২০ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে বাজেট ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহির বিভিন্ন দিক আলোচনায় উঠে আসে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বাজেট একটা ছকবাঁধা বাজেটে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের পরিমাণ বাড়ে। সেই হিসাবে বাজেটের যে খাতগুলো আছে, এগুলোতে আমরা কিছু যোগ-বিয়োগ করি, আর দু-একটা বড় বড় প্রকল্প যোগ-বিয়োগ করি। আমাদের কাঠামোগত সংস্কার দরকার। নতুন করে রিডিজাইন করা দরকার।’

সুজনের সম্পাদক আরও বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়ন মানে হচ্ছে তাদের অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন। বৈষম্য যখন বাড়ছে, তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে না। যেসব প্রকল্পের মাধ্যমে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বাড়ছে তাতে এক শ্রেণির মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছে হচ্ছে। পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মানের দিক থেকে ভালো করছে না, যা মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সংসদে বাজেট পেশ হয় এবং তা দ্রুতই বাস্তবায়নের জন্য তাড়াহুড়া হয়। বাজেট নিয়ে সংসদে কোনো জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয় না।

মাথাপিছু আয়ে ধনী ও দরিদ্রের আয়ের মোট হিসাব ভাগ করলে সার্বিক আয় বেড়ে যায়, উল্লেখ করে সুজন সভাপতি বলেন, ‘দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন যদি অর্থমন্ত্রী হন, তাহলে উনি তো আমাদের দুঃখ বুঝবেন না।’ এ ছাড়া তিনি নিজে অনেকগুলো বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন জানিয়ে বলেন, সরকার কখনো সাধারণ মানুষের কথা বা সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের কথা কানে নেয় না।

বৈঠকে অর্থবছর পরিবর্তন করার দাবি জানান তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, জুলাই-জুন অর্থবছর পরিবর্তন করতে হবে। এটা এপ্রিল-মার্চ বা ডিসেম্বর-জানুয়ারি হতে পারে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সব পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওপর। নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান হওয়ার জন্য যে দক্ষতা দরকার, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। তবে এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞনির্ভর প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। বিবিএস সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বা সরকারের ওপর নির্ধারিত ডেটা প্রভাবিত করার যে অভিযোগ আছে, সেটা থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব না। এ ছাড়া তিনি বলেন, বিবিএসর প্রাথমিক তথ্য জনগণ পায় না।

সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিকে কৌতুক বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি আরও বলেন, রূপপুর ও রামপাল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংসাত্মক প্রকল্প। তাঁর দাবি, উন্নয়ন ব্যয়ের ধরনের কারণে আয় বৈষম্য বেড়েছে। জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ কর নেওয়া হচ্ছে, সে পরিমাণ সেবা তারা পাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার কথা বলেন তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এটা বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীকে তুষ্ট করার বাজেট। লুটপাটের ধারাবাহিকতা বাজেটের মধ্যে অব্যাহত আছে। কীভাবে বেশিসংখ্যক মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে, সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পরিচিত খাত থেকে কর আদায় হচ্ছে।

বাজেট নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়ছে। অন্যদিকে বৈষম্যও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির ধারা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। রাজস্ব আয়–ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আয়কর প্রধান আয়। কিন্তু বাংলাদেশকে মূল্য সংযোজন করের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাজেট প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতে গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি রয়েছে। বাজেট ব্যবস্থাপনার সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, বিআইডিএসের গবেষক নাজনীন আহমেদ, সুজনের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।