Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোটদেরও টিকিয়ে রাখতে প্রণোদনা দিতে হবে

করোনার পর আবার দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা–বাণিজ্য শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুর গতিই আগের মতো স্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ। অনেকেই ঝরে গেছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। বলছেন দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সুজা-উর-রব চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজিউল ইসলাম

সুজা-উর-রব চৌধুরী
প্রশ্ন

প্রথম আলো: করোনাভাইরাস দিনাজপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: দিনাজপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। তাই করোনার কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ডেইরি ফার্ম ও পোলট্রিশিল্পের মালিকেরা তাঁদের উৎপাদিত দুধ, ডিম ও মাংসের এবং কৃষকেরা শাকসবজির ন্যায্যমূল্য পাননি। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতার অভাবে পণ্য নষ্ট হয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। ফলে কৃষক, খামারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। যান চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরাও যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছেন। করোনায় কৃষক–শ্রমিকসহ সব ধরনের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে যে ধাক্কা খেয়েছেন, তা সামলে নিতে অনেক সময় লাগবে।

প্রশ্ন

করোনা–পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: করোনা আমাদের বড় একটা শিক্ষা দিয়ে গেল। তা হলো মনোবল আরও দৃঢ় করার শিক্ষা। যেসব ছোট ছোট ব্যবসায়ী করোনাকালে পুঁজি ভেঙে সংসার চালিয়েছেন, তাঁদের কেউ সরকারি প্রণোদনা সহায়তা পেয়ে, কেউবা ধারকর্জ করে, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পুনরায় ব্যবসা-বাণিজ্য চালুর চেষ্টা করছেন। তবে ব্যবসা–বাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সবার আগে ছোট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার আওতায় আনা প্রয়োজন।

করোনায় কৃষক–শ্রমিকসহ সব ধরনের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে যে ধাক্কা খেয়েছেন, তা সামলে নিতে অনেক সময় লাগবে।
সুজা-উর-রব চৌধুরী, সভাপতি দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
প্রশ্ন

দিনাজপুরের ব্যবসায়ীদের সরকারি প্রণোদনা পেতে কি কোনো সমস্যা হচ্ছে? এক্ষেত্রে জেলা চেম্বার কি ধরনের ভূমিকা পালন করছে?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: দিনাজপুরেও ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পেয়েছেন। তবে তাঁরা সংখ্যায় খুব কম। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, ব্যাংকের কিছু নিয়মকানুন আছে, যেগুলো ব্যবসায়ীরা পূরণ করতে পারেন না। আর ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের অনায়াসে ঋণ দিলেও ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বিষয়টাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। তাই ছোট ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে এনজিওর দিকে ঝুঁকছেন। এ অবস্থায় চেম্বার ছোট ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার টাকা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন

দিনাজপুরের সুগন্ধি চাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে কয়েকটি দেশে রপ্তানি হতো। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন মিলমালিকেরা।

সুজা-উর-রব চৌধুরী: সুগন্ধি চালের রপ্তানি আদেশ অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ, কমিউনিটি সেন্টারে যাবতীয় অনুষ্ঠানাদি আয়োজনও বন্ধ থাকায় চালের বিক্রি নেই। আগে এই চাল দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যেত। এখন সেটিও বন্ধ। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল অবিক্রীত রয়ে গেছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০-৫০ কোটি টাকা।

প্রশ্ন

দিনাজপুরের অনেক মিলারই চুক্তি করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (১৫ সেপ্টেম্বর) সরকারকে চাল দেননি। কিন্তু কেন?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: অসহযোগিতা নয়, বরং যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কেউ কেউ চাল দেননি, এ কথা সত্য। কিন্তু যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা একেকজন ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে সরকারকে চাল দিয়েছেন।

প্রশ্ন

করোনা–পরবর্তীকালে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরনে কোনো পরিবর্তন বা পেশা বদল হচ্ছে কি না?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পেশা বদল করেছেন। তাঁরা জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করছেন বা কৃষিশ্রমিক হিসেবে দিনমজুরি খাটছেন।

প্রশ্ন

দিনাজপুর একটি পুরোনো জেলা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। এ ব্যাপারে আপনাদের ভাবনা কী?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: শিল্পকারখানা স্থাপন ও বিকাশে সবার আগে দরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ। এখানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো গ্যাস–সংযোগ আসেনি। ফলে শিল্পকারখানা হয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত ২০ আগস্ট একনেক সভায় দিনাজপুরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক স্থাপন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে জেলার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপন করতে পারবেন।

প্রশ্ন

দিনাজপুরের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। কিন্তু অনেক সময়ই কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। এ বিষয়ে কী বলবেন?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: কৃষক হচ্ছে আমাদের প্রাণ। করোনাকালে যেটা আমরা আরও বেশি উপলব্ধি করেছি। তাঁরা যেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য বাজারব্যবস্থা পরিবর্তনে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন

করোনাকালে অনলাইনে ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। অনলাইন প্লাটফর্মের সম্ভাবনা কতখানি?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: অনলাইন ব্যবসায়িক কার্যক্রম একটি যুগোপযোগী ও সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম। দিনাজপুরেও এ রকম বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে, যা সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক।

প্রশ্ন

দিনাজপুরে নারী উদ্যোক্তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে নারী উদ্যেক্তাদের নিয়ে চেম্বারের ভাবনা কী?

সুজা-উর-রব চৌধুরী: হ্যাঁ, এটি আমাদের জন্য অনেক ভালো খবর। ইতিমধ্যে জেলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, বিউটি পার্লার, বুটিক হাউসসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। চেম্বারের সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও ব্যাংকে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া জেলার উইমেন চেম্বারও নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে দেখভাল করছে।