Thank you for trying Sticky AMP!!

জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা

.
*অনলাইনে দেশি ফ্যাশন হাউস থেকে পোশাক কিনে স্বজনদের কাছে পাঠান প্রবাসীরা

*আড়ং, ক্যাটস আই,সাদাকালো, নগরদোলা,ওটু, স্মার্টেক্সসহ নামীদামি ফ্যাশন হাউসের জমজমাট অনলাইন বেচাকেনা

অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন পোর্টাল থেকে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও কেনাকাটা করেন। এবারে ঈদে এ কেনাকাটা আরও বেড়েছে। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ নিকট আত্মীয়স্বজনকে হালফ্যাশনের দেশি পোশাক উপহার দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এ সুযোগ করে দিয়েছে দেশের খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউসগুলো। আত্মীয়স্বজনের কাছে ওই পোশাক পৌঁছে দিয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলোই।
শুধু ফ্যাশন হাউস নয়, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করেন প্রবাসীরা।
বড় ফ্যাশন হাউস কিংবা বেচাকেনার অনলাইন পোর্টালে প্রবেশ করে প্রবাসীরা দূরদেশের ঘরে বসেই তাঁদের আত্মীয়স্বজনের জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট, টি-শার্টসহ বাহারি পোশাকের ক্রয়াদেশ দেন। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, মানিগ্রাম, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করেন তাঁরা। শুধু পণ্যটি কোথায় পৌঁছে দিতে হবে, সেই ঠিকানা লিখে দেন তাঁরা। মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যে ওই ঠিকানায় ঈদের উপহার পৌঁছে যায়।
সুইডেনপ্রবাসী রিয়া তাহসিন এবারের ঈদে দেশে আসতে না পারলেও বাবা-মাকে ঠিকই পছন্দের দেশি উপহার পাঠিয়েছেন। এ জন্য তিনি বেছে নেন অনলাইনভিত্তিক বুটিক হাউস লা-ফারিশাকে। এখান থেকে মায়ের পছন্দের লাল রঙের শাড়ি ও বাবার জন্য পাঞ্জাবির অর্ডার দেন তিনি। পোশাকের নির্ধারিত দাম অনলাইনেই শোধ করেন। তিন দিনের মধ্যে রাজধানীর মহাখালীর বাসায় পৌঁছে যায় মায়ের শাড়ি, বাবার পাঞ্জাবি।
লা-ফারিশার কর্ণধার নাসরিন চৌধুরী বলেন, ঢাকার মহাখালীতে রিয়ার মায়ের হাতে যখন শাড়িটা পৌঁছে দেওয়া হয়, তখন আনন্দে কেঁদেই ফেলেন তাঁর মা। শুধু রিয়াই নন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া থেকে অন্তত ২০ জন নিয়মিত অনলাইনে প্রিয়জনদের জন্য লা-ফারিশা থেকে কাপড় কেনেন বলে জানা গেল। গত এক মাসে এমন প্রায় পাঁচ লাখ টাকার অর্ডার দেওয়া পণ্য তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন।
গত বছরের ১৭ জুলাই থেকে প্রথমবারের মতো অনলাইনে পোশাকসহ অন্য পণ্য বিক্রি করছে দেশের খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউস আড়ং। চালুর মাত্র এক বছরে অনলাইনে আড়ংয়ের বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানালেন আড়ংয়ের ব্যবস্থাপক আহমেদ মনসুর রউফ। আড়ংয়ের ওয়েব পোর্টালে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি ক্রয়াদেশ আসছে। এসব ক্রয়াদেশের উল্লেখযোগ্য অংশই দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনলাইনে একজন প্রবাসীর দেওয়া স্থানীয় ঠিকানায় খুব অল্প সময়েই পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের মে থেকে অনলাইনে শার্ট-প্যান্টসহ প্রায় সব পণ্যই অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছে আরেক জনপ্রিয় দেশীয় ব্র্যান্ড ক্যাটস আই। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে অনেক প্রবাসী অনলাইনে ও ফেসবুকে তাঁদের পণ্য কিনছেন।
শুধু নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল ছাড়াও অনলাইন মার্কেট প্লেসেও ঢুঁ মারছেন অনেকে। দেশের স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করছেন। এমন একটি ওয়েব পোর্টাল হলো বাংলাদেশ ব্র্যান্ডস ডটকম অনলাইন মার্কেট প্লেস। এবারের ঈদ উপলক্ষে এখানে রং, ক্যাটস আই, সাদাকালো, ওটু, স্মার্টেক্স, এক্সট্যাসিসহ দেশের ২২টি খ্যাতনামা ফ্যাশন হাউসের পাঞ্জাবি, শাড়ি, শার্ট, টি-শার্ট এবং বাহারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো। প্রবাসী ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রতিটি পোশাকের দাম বাংলাদেশি টাকা ও ডলার—দুভাবেই উল্লেখ করা আছে। কাঙ্ক্ষিত স্থানে পণ্য পৌঁছে দিতে বাড়তি মাত্র ৬০ থেকে ৮০ টাকা গুনতে হয় প্রবাসীকে।
বাংলাদেশ ব্র্যান্ডস ডটকম কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্রয়াদেশ পেয়েছে। প্রবাসীদের কেনা সেই পোশাক ছয় কর্মদিবসের মধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীরা মাস্টারকার্ড ও ভিসাকার্ডের মাধ্যমে পোশাকের দাম দিয়েছেন। আর বিক্রেতা ফ্যাশন হাউস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়েছেন ওয়েব পোর্টাল মালিকেরা।
এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতবারের চেয়ে এবার প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি টাকার অর্ডার পাওয়া গেছে।
অনলাইন কেনাকাটার ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা ঠেকাতে এখন পণ্য ক্রেতার হাতে যাওয়ার পর টাকা নেওয়া হচ্ছে।
রাসেল টি আহমেদ আরও বলেন, অনলাইন কেনাকাটার সব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করে এক ছাতায় আনতে বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্স নামের একটি আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। কোনো গ্রাহক প্রতারণার শিকার হলে যাতে অভিযোগ দিতে পারেন, সে জন্য খুব শিগগির একটি কল সেন্টার চালুর কথা জানান তিনি।