Thank you for trying Sticky AMP!!

জাহাজজটে বিপদে রপ্তানিকারকেরা

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট আবার বেড়েছে। গত মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই জট দিন দিন বাড়ছে। জটের কারণে বর্তমানে আমদানি করা পণ্য বা কাঁচামাল জাহাজ থেকে নামাতেই আট দিন বাড়তি সময় লাগছে। ঈদুল আজহার ছুটিতে জট আরও তীব্র হতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দরের সাম্প্রতিক এই জটে বেশি বিপদে পড়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক খাত। এই খাতের কারখানাগুলো পণ্য উৎপাদনে যে সময় পাচ্ছে, তার আট দিন চলে যাচ্ছে বন্দর থেকে কাঁচামাল বুঝে পেতে।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) প্রথম জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জটের কারণে কাঁচামাল হাতে পেতে দেরি হওয়ায় পণ্য উৎপাদনেও দেরি হবে। তাতে ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠানো সম্ভব হবে না। তাই দ্রুত এই জাহাজজট দূর করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

বন্দরের সাম্প্রতিক জাহাজজটের মূল কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গত মে মাসের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে তিন দিন বন্দরজেটিতে কোনো কাজ হয়নি। তাতে ১১-১২টি জাহাজের জট তৈরি হয়। এরপর রোজায় বন্দরের কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় এবং ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে জট আর কমেনি। এ অবস্থায় গত মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টিতে বন্দরের উৎপাদনশীলতা কমে আসে। তাতে জট আরও বেড়ে যায়।

>

জটের কারণে আমদানি পণ্য পেতে সময় লাগছে ৮ থেকে ১২ দিন
ঈদের বন্ধে এই জট আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা

দেশের প্রধান এই বন্দরে বর্তমানে জেটিতে ভেড়ানোর জন্য প্রতিদিন ১৬-১৭টি জাহাজ সাগরে অপেক্ষায় থাকে। ক্রম অনুযায়ী এসব জাহাজ জেটিতে ভিড়তে আট দিনের মতো লেগে যাচ্ছে। এরপর পণ্য খালাসের আনুষঙ্গিকতা শেষ করতে লাগছে আরও চার দিন। সব মিলিয়ে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য বুঝে পেতে ন্যূনতম ১২ দিন চলে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, নানা সংস্কার কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছরের নভেম্বরে জট নিরসন হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আবারও জাহাজজট দেখা দিয়েছে। তবে এই জট দ্রুত নিরসন করা সম্ভব হবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

রপ্তানিকারকেরা অসহায়
চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস ১ লাখ ৬০ হাজার পিচ বাচ্চাদের স্কার্ট রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একজন ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এসব পণ্য রপ্তানির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, বন্দরে জট তৈরি হওয়ায় তিন দিন আগে রপ্তানি আদেশ বাতিল করে দিয়েছে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানটি।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার তাঁবু কারখানা এইচকেডি ইন্টারন্যাশনালও যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্রেতার কাছে তাঁবু রপ্তানি নিয়ে বিপাকে আছে। চীন থেকে তাদের চালান বন্দরে আসার কথা ১৪ আগস্ট। এই কাঁচামাল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু তাঁবু তৈরি করে ক্রেতা-প্রতিনিধিদের দেখাতে হবে। ক্রেতা-প্রতিনিধি আসবেন ২৬ আগস্ট। কিন্তু বন্দরে এখন যে জট, তাতে কাঁচামাল খালাস করে এ সময়ে উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ক্রেতা-প্রতিনিধিকে প্রস্তুত পণ্য দেখাতে না পারলে বিপদে পড়তে হবে।

স্বস্তি-অস্বস্তি
বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের মে মাস থেকে। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। গত ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি পণ্য হাতে পেতে দুই দিনের বেশি লাগেনি। তবে দুর্যোগের কারণে মে মাস থেকে আবারও শুরু হয় জট।

জানতে চাইলে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আহমেদ সাহেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জট অব্যাহত থাকলে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জাহাজ ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে জাহাজ পরিচালনাকারী বিদেশি কোম্পানিগুলো। তাই ভাড়া বাড়ানোর আগে জাহাজজট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।