Thank you for trying Sticky AMP!!

জাহাজ ভাঙার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ

জাহাজ নির্মাণ ও মালিকানায় বিশ্বসেরার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। তবে জাহাজ ভাঙায় বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বিশ্বে যত জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশই বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা ‘আঙ্কটাড’ প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রকাশনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩০ অক্টোবর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন, জাহাজ নির্মাণ, মালিকানা ও নিবন্ধন এবং সমুদ্র যোগাযোগে দেশগুলোর অবস্থান নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজ ভাঙায় বাংলাদেশের পরের অবস্থান ভারতের। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৮৬ লাখ টন আয়তনের জাহাজ ভেঙেছে। ভারতে ভাঙা হয়েছে ৪৬ লাখ ৯০ হাজার টন আয়তনের জাহাজ। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে পাকিস্তান, তুরস্ক ও চীনের। ২০১৭ সালে জাহাজ ভাঙায় শীর্ষস্থানে ছিল ভারত।

জাহাজ ভাঙা শিল্পে আশির দশকে নেতৃত্বে ছিল তাইওয়ান। নব্বইয়ের দশকে তাইওয়ানের সঙ্গে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া এই খাতে নেতৃত্ব দেয়। এরপরের দুই দশকে ভারত ও চীন ছিল জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে। গত এক দশক ধরে এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও মাঝে মাঝে শীর্ষস্থানে উঠে আসে। এবার এই খাতে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে সব দেশকে।  

জাহাজ ভাঙায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসার কারণ হলো, ইস্পাতের কাঁচামাল জোগানে নির্ভরতা। ভারতের ইস্পাত তৈরির জন্য মৌলিক কাঁচামাল আকরিক লৌহ আছে। সেখানে পুরোনো জাহাজ ভাঙার জন্য কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা কম। জাহাজ ভাঙা–সংক্রান্ত নিয়মকানুনে বাধ্যবাধকতা বাড়ছে। প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, পরিবেশদূষণ কমাতে চীন নিজ দেশের বাইরে থেকে পুরোনো জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন জাহাজ ভাঙার বড় বাজার হয়ে উঠছে।

>

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন
পরিবেশদূষণ কমাতে চীন বাইরে থেকে পুরোনো জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে
ফলে বাংলাদেশ এখন জাহাজ ভাঙার বড় বাজার হয়ে উঠছে

জাহাজ ভাঙা খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে রডের চাহিদা বাড়ায় গত বছর পুরোনো জাহাজ আমদানি বেড়েছিল। পুরোনো জাহাজ বেচাকেনার বৈশ্বিক বাজার এখন বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল।

কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ১৯৬টি জাহাজ ভাঙার জন্য আমদানি হয়। এসব জাহাজ থেকে পাওয়া গেছে ২৫ লাখ ৮১ হাজার টন লোহা। এ জন্য ১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা গুনতে হয়েছে।

জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে থাকলেও জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান জাহাজ নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর এই তিনটি দেশ বিশ্বের ৯০ শতাংশ জাহাজ নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশ করেছে দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আবার জাহাজের মালিকানায় শীর্ষ দেশ হলো গ্রিস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এবার প্রবৃদ্ধি কমেছে। গত বছর বিশ্বে ১১ কোটি বিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ঐতিহাসিক গড় প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের চেয়ে কম। চলতি বছর এই প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবসহ নানা কারণে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের প্রবৃদ্ধি কমছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।