Thank you for trying Sticky AMP!!

জিএসপি স্থগিতের বার্তা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স বা জিএসপি) স্থগিত করার মধ্য দিয়ে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে৷ বাংলাদেশও এই বার্তাকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে৷
আর তাই জিএসপি চালুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো পূরণে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি নতুন ও সম্ভাবনাময় অন্য বাজারগুলোয় রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হচ্ছে৷
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকনেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে এ রকম অভিমতই ব্যক্ত করেন৷ তাঁরা রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশিত সাংবাদিক রঞ্জন সেনের লেখা মার্কিন জিএসপি-অর্থনীতি না রাজনীতি নামক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচনা করছিলেন৷
উল্লেখ্য, গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৫ জন শ্রমিকের প্রাণহানির পর বিশ্বব্যাপী নিন্দা-সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ তৈরি পোশাক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে পড়ে৷ এর জের ধরে জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে, যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়৷
আলোচনায় বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির এক শতাংশেরও কম পণ্য ছিল জিএসপি সুবিধাভোগী। এসব পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্লাস্টিক, সিরামিক, গলফ খেলার উপকরণ, কার্পেট, চশমা, পতাকা, চুরুট ইত্যাদি। তৈরি পোশাকসহ প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো এই সুবিধা কখনোই পায়নি৷ আর তাই আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি৷ কিন্তু এটি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলেছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১২ সালে জিএসপিভুক্ত পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল তিন কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আর ২০১৩ সালে তা নেমে এসেছে দুই কোটি ১৫ লাখ ডলারে। অর্থাৎ রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার৷
জিএসপি স্থগিত হওয়ার মানে হলো যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বা শুল্কছাড় সুবিধা পেত, সেগুলো আর ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে এসব পণ্য রপ্তানিতে প্রচলিত হারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। পণ্যভেদে শুল্ক হার ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জিএসপি পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু শর্ত আংশিক পূরণ হয়েছে৷ বাকিগুলো পূরণের প্রিক্রয়া চলছে। কেননা এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে পূরণযোগ্য। জিএসপি সুবিধা প্রদানের বিষয়ে কংগ্রেসে বিল পাস হলে বাংলাদেশের ওপর থেকে স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
জিএসপি পুনরুদ্ধারের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শ্রমিকদের মজুির বাড়ানো, শ্রম আইনে সংশোধন আনা, কারখানার নিরাপত্তা পরিবেশ বাড়ানো ইত্যাদি৷ এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় ও আইএলও যৌথভাবে কারখানাগুলো পরিদর্শন করছে৷ তিন হাজার ৫০০ কারখানার মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি কারখানায় বিভিন্ন ধরনের ক্রুটি পাওয়া গেছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা তাই এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্যই জিএসপি পুনরুদ্ধারের ওপর েজার দেন৷ তাঁরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি-সুবিধা বাতিল হওয়ার প্রভাব যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে না পড়ে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে৷ আমেরিকান অনেক কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের প্রতি সংবেদনশীল৷ তাদের জিএসপি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বোঝাতে হবে৷ জিএসপি পুনরুদ্ধারে তৈরি পোশাকশিল্পে যেসব ভালো কাজ রয়েছে, সেগুলো মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন তাঁরা৷
অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর, অ্যামচেম বাংলাদেশের সভাপতি আফতাবুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, শ্রমিক নেতা রায় রমেশ চন্দ্র, বইয়ের লেখক রঞ্জন সেন ও প্রকাশক আরিফুর রহমান নাঈম বক্তব্য দেন৷