Thank you for trying Sticky AMP!!

জিডিপিতে মনোযোগ, পরিবেশে নেই

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা

দেশে এখন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু জাতীয় আয়। অর্থনীতির এ দুটি সূচক নিয়েই দেশে যত আলোচনা, কিন্তু উন্নয়নের পরিণতিতে পরিবেশদূষণের ভয়াবহতা নিয়ে কারও মনোযোগ নেই। অথচ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্তই হচ্ছে পরিবেশের উন্নয়ন। রাজনৈতিক সুশাসন ছাড়া পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে আজ বুধবার বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বক্তব্য দেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইয়েন জু ইয়াই, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের বাস্তুতন্ত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অবৈধ দখল। তুরাগ নদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই দখল হচ্ছে তুরাগ নদ। অবৈধ দখলদারদের খপ্পরে পড়েছে এই নদী, কিন্তু দখল থামানো যাচ্ছে না। আদালত তুরাগ নদ রক্ষায় একে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছে, তা সত্ত্বেও অবৈধ দখলের আনুষ্ঠানিক তথ্য বিবিএসের কাছে নেই। এমনকি অবৈধ দখল থামানোও যাচ্ছে না। নদী দখলের পাশাপাশি বন উজাড় হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় সম্পদের হিসাব রাখতে হবে। সবক্ষেত্রেই এই হিসাব থাকা জরুরি।

‘বাংলাদেশে সবুজময়: উন্নতির পথে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘জনসংখ্যার তুলনায় আয়তনে বাংলাদেশ ছোট দেশ। এখানে যে কোনো উন্নয়ন করতে গেলেই প্রকৃতির ওপর আঘাত আসে। কৃষিজমি নষ্ট হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক মিল। তারাও একটি ছোট দেশ, কিন্তু তারা কীভাবে উন্নয়ন করেছে, সেটা বুঝতে হবে। প্রকৃতি বিনষ্ট না করে উন্নয়ন করছে তারা।

আমাদেরও সেই পথে এগোতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে কৃষিজমি, নদী এমনকি বনভূমি পর্যন্ত উজাড় করে ফেলছি। এ ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো, পরিবেশ সংরক্ষণ। এ বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সরকার কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা করছে। কার্বন নিঃসরণে আমাদের দায় কম, কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, কার্বন নিঃসরণ কমাতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের পরামর্শ, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার সময় বিস্তারিত গবেষণা করা উচিত। পরিবেশের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় থাকা উচিত, কিন্তু গবেষণায় সব বিষয়ের সমান গুরুত্ব থাকে না। জিডিপির প্রবৃদ্ধির ওপর যতটা মনোযোগ, সেটা অন্যদিকে তেমন থাকে না। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কখনোই পরিপূর্ণ পরিসংখ্যান নয়, কোনো না কোনো ত্রুটি থেকেই যায় এতে। দেশের অনেক মানুষ এখন পর্যন্ত বোঝেই না জিডিপি কী। এ সময় তিনি ‘ন্যাশনাল নেচার অ্যাকাউন্ট’ গড়ার তাগিদ দেন, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের হিসাব থাকবে।

দেশে সবার মনোযোগ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ওপর, কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদও যে গুরুত্বপূর্ণ সেদিকে মনোযোগটা কম বলে অভিযোগ করেন আহসান এইচ মনসুর। বলেন, এ মনোভাব পরিবর্তন করা জরুরি। দেশের উন্নয়ন টেকসই হতে হবে। রাজনৈতিক সুশাসন পরিবেশ রক্ষার প্রধান হাতিয়ার বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।