Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি

জীবন ও জীবিকা নিয়ে নানা বিপত্তি

  • সুইডেনে করোনাকে সামাল দেওয়ার চেয়ে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফল হলো, প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ৫৮ দশমিক ১। আর জিডিপি কমেছে ৮ দশমিক ৩।

  • নিউজিল্যান্ড এর ঠিক উল্টো পথ নিয়ে জীবন বাঁচাতে কড়া লকডাউনের পথে গেছে। প্রতি লাখে এ দেশে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫। কিন্তু বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে ঝরেছে ১০ লাখ প্রাণ। ৯ মাস আগে যখন এর প্রাদুর্ভাব, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সংক্রমণের ধীরগতিই রেকর্ড করত। পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন শুধু ভারতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়েছে এই গেল সেপ্টেম্বরে। সারা বিশ্বকে আবার কাঁপাচ্ছে এই মহামারি।

ইউরোপের কিছু আক্রান্ত দেশ ভেবেছিল, একে প্রশমন করা গেছে। সেসব দেশে আবার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনি। যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। দেশটির ২৬টি অঙ্গরাজ্যে বাড়ছে সংক্রমণ। এসব তথ্য-উপাত্ত এক বড় ভোগান্তির চিত্রই তুলে ধরে। এখন প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের ভূমিকা নিয়ে। ডব্লিউএইচও গেল মাসেই বলেছে, একটি কার্যকর টিকা আসার আগেই করোনায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এই মৃত্যু ঠেকাতে পারে। এর জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান চাই। কিন্তু এমন প্রচেষ্টার ইঙ্গিত তো মেলে না।

বিশ্বের সরকারগুলো এক ভুল পথেই আছে
দ্য ইকোনমিস্ট
জীবন না জীবিকা—এই প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়েই

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, বিশ্বের সরকারগুলো এক ভুল পথেই আছে। করোনার এই প্রবল পরাক্রমের মধ্যে উত্তর গোলার্ধে শীতের পদধ্বনি। এর অর্থ হচ্ছে, এই অঞ্চলের মানুষ বৈরী আবহাওয়ায় ঢুকবে ঘরের ভেতরে। এখন পর্যন্ত গবেষণায় তথ্য, করোনাভাইরাস উন্মুক্ত স্থানের চেয়ে বদ্ধ স্থানে বেশি ছড়ায়। এর সঙ্গে এই শীতে যুক্ত হবে মৌসুমি ফ্লু। না ইকোনমিস্ট এই নেতিবাচক নানা দিকের পাশাপাশি শুনিয়েছে আশার কিছু কথা। শনাক্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান অবশ্য আশা-নিরাশায় মেলানো। চিকিৎসা ও ওষুধ কোভিড-১৯কে বেশি ভয়ানক হতে দেয়নি। নতুন টিকা ও ওষুধ আসছে। একে প্রতিরোধ করার জন্য সমাজে কিছু পদ্ধতি ইতিমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক দেশ।

কোভিড-১৯ আরও দীর্ঘ সময় তার প্রাণঘাতী তৎপরতা চালাবে। সরকারগুলোকে অবশ্য ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। মে মাসের তুলনায় মৃত্যুর হার কমেছে। ব্যাপক হারে টেস্টের পরিমাণ বাড়ানো এই সফলতায় ভূমিকা রেখেছে, যদিও ভারতের মতো কিছু দেশে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। মৃত্যুর কম সংখ্যা চিকিৎসা ব্যবস্থার অগ্রগতির একটি প্রমাণও তুলে ধরে। চিকিৎসকেরা বুঝতে পেরেছেন, ফুসফুস ছাড়াও হার্ট ও কিডনিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে করোনা হলে। এগুলোরও সুরক্ষা দরকার। মহামারির শুরুতে যুক্তরাজ্যে আইসিইউর ৯০ শতাংশ রোগীকে ভেন্টিলেটর দেওয়ার প্রয়োজন হতো। জুন মাসে এসে এর পরিমাণ কমে হলো ৩০ শতাংশ। কম দামের স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসন মৃত্যুর ঝুঁকি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়েছে। বসন্তের তুলনায় ইউরোপে এখন ৯০ শতাংশ মৃত্যু কমেছে। এমন অনেক ভালো খবর আছে বটে। কিন্তু এরপরও করোনা শিগগিরই যাবে না।

প্রতীকী ছবি

২০২১ সাল পর্যন্ত এটি আমাদের জীবনযাপনের অংশ হয়েই থাকবে। একটি টিকা এলেও এর কার্যকারিতা শতভাগ হবে না। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে যাদের প্রতিরোধ শক্তি কম, তাদের সুরক্ষা ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। বিশ্বের মানুষের জন্য কয়েক শ কোটি টিকার ডোজ দরকার। এটি বানাতে আগামী বছরের বড় সময় চলে যাবে। এসব বাস্তবতায় টেস্ট, শনাক্ত করা এবং সামাজিক দূরত্বের মধ্যেই করোনা প্রতিরোধের উপায় খুঁজতে হবে। আর দরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ।

জীবন না জীবিকা—এই প্রশ্ন বিশ্বজুড়েই এখন উঠছে। সরকারগুলো এই দুটোর মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে উপস্থিত হচ্ছে এক বিষম বিপত্তি। সুইডেনে করোনাকে সামাল দেওয়ার চেয়ে অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফল হলো, প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ৫৮ দশমিক ১। আর জিডিপি কমেছে ৮ দশমিক ৩। নিউজিল্যান্ড এর ঠিক উল্টো পথ নিয়ে জীবন বাঁচাতে কড়া লকডাউনের পথে গেছে। প্রতি লাখে এ দেশে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫। কিন্তু বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু দুই কূল রেখে ভালো করার উদাহরণও আছে। যেমন তাইওয়ান।

Also Read: কী যাতনা এই করোনায় বুঝছে বিশ্ব অর্থনীতি

অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত ছিল কিন্তু তারপরও লাখে মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। দেশটি জিডিপির সংকোচন দেখেছে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। তাইওয়ানের মতো জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া টেস্ট এবং শনাক্তের উন্নততর পথে গিয়ে সুফল পেয়েছে। জার্মানি চিহ্নিত করেছে, মাংসের বাজার থেকে ছড়িয়েছে ভাইরাস। দক্ষিণ কোরিয়া বার ও চার্চ বন্ধ করে সংক্রমণ ঠেকিয়েছে। টেস্ট কম যেখানে, সেখানেই এসেছে ব্যর্থতা। যেমন ফ্রান্স। কন্টাক্ট ট্রেসিং যেখানে ভালো হয়নি, বিপদ এসেছে সেখানেও। যেমন ইসরায়েল।

সরকারগুলোকে অবশ্যই একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যার একটি আর্থসামাজিক মূল্য আছে। মাস্ক দামে কম এবং এর ব্যবহার সহজ। ডেনমার্ক ও জার্মানিতে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোলাহলপূর্ণ বার খুলে দেওয়া কখনোই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। যুক্তরাজ্যে বারকয়েক নির্দেশ পরিবর্তন করা হয়েছে। সেটা ভালো ফল দেয়নি। মহামারি যখন শুরু হলো, সরকারগুলো অপ্রস্তুত ছিল স্বাভাবিকভাবেই। এখন তাদের এই অজুহাত দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্যে টেস্ট ভালোমতো হচ্ছে না, জুলাই থেকে সংক্রমণ আবার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তারাও ভ্রান্তি, দুর্বল নেতৃত্ব আর খোদ প্রেসিডেন্টের উপেক্ষায় জর্জরিত হয়েছে। এ মহামারি সহজে যাবে না। সরকারগুলোকে অবশ্যই সবল হাতে দাঁড়াতে হবে।

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে