Thank you for trying Sticky AMP!!

জেট এয়ারওয়েজ বন্ধের লাভ-ক্ষতি

>
  •  জেটের ঘাড়ে ৮ হাজার ৫০০ কোটি রুপির ব্যাংকঋণের বোঝা
  •  কর্মীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

তহবিল–সংকটে ভারতের বৃহৎ বেসরকারি বিমান কোম্পানি জেট এয়ারওয়েজের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিমান পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। আড়াই দশক আগে ডানা মেলেছিল জেট এয়ারওয়েজ। শুরুতে ঘরোয়া উড়ানের পরে চালু করেছিল আন্তর্জাতিক পরিষেবা। কিন্তু পুঁজির অভাবে বুধবার গুটিয়ে ফেলতে হলো ডানা। বিবিসি সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

জেট এয়ারওয়েজের দুটি বিমান প্রতিদিন ঢাকা-কলকাতা ও কলকাতা-ঢাকা পথে চলত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিমান কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সাময়িকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দেশের বেসরকারি বিমান পরিবহন কোম্পানি ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভবত ভারতের স্পাইস জেট ও ইন্ডিগো জেট এয়ারওয়েজের বিমান ইজারা নিয়ে এই পথে উড়ান চালু করবে। জেটের কর্মীদেরও নিয়োগ দেবে তারা। তিনি আরও বলেন, ঢাকা-কলকাতা পথে ভারতীয় বিমান কোম্পানির উড়ান যত দিন চালু না হচ্ছে, তত দিন দেশের বিমান কোম্পানিগুলো জেটের যাত্রী পাবে।

জেটের ঘাড়ে এ মুহূর্তে ৮ হাজার ৫০০ কোটি রুপির ব্যাংকঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের অন্তত তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানের টিকিটের দামও। ফলে অনেকে মনে করছেন, নতুন করে কেউ পুঁজি না ঢাললে জেটের ভাগ্য চরম অনিশ্চিত। এই বোঝা মাথায় নিয়ে তারা আপাতত নিলামপ্রক্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যার ফলাফল বুঝতে এখনো দু–তিন সপ্তাহ বাকি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় জেট এয়ারওয়েজ বিবৃতি দিয়ে জানায়, পুঁজির অভাবে আপাতত পরিষেবা স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। রাতে তাদের শেষ উড়ানটি দিল্লি থেকে অমৃতসরে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাত পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জেটের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে।

ভ্রমণ সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা নরেশ গয়াল ১৯৯২ সালে জেট এয়ারওয়েজ চালু করেছিলেন। তারা প্রথমবার আর্থিক সমস্যার মুখে পড়ে ২০১০ সালে। সেই দফায় ধাক্কা সামলাতে পেরেছিলেন গয়াল। কিন্তু এবার আর পারলেন না। উড়ান যুদ্ধে সস্তা টিকিটের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জ্বালানির দামসহ পরিষেবার খরচ বাড়ছিল ধীরে ধীরে। তখনই তারা বিপদে পড়ে। পরপর চারটি প্রান্তিকে ক্ষতির মুখ দেখতে হয় তাদের। বাকি পড়ছিল তেল কোম্পানিগুলোর টাকা। ঋণও শোধ করতে পারছিল না তারা। সেই সঙ্গে বিমান ভাড়া দেওয়া কোম্পানিগুলোর টাকা, কর্মীদের বেতনও বকেয়া পড়ছিল। টাকা বাকি থাকায় একাধিকবার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত মার্চে জেটের ৫১ শতাংশ অংশীদারি নেয় ভারতের স্টেট ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতাদের গোষ্ঠী। সিদ্ধান্ত হয়, চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাবেন গয়াল। কমে যাবে তাঁর অংশীদারি। শেয়ার কমবে আরেক অংশীদার ইতিহাদেরও। শুরু হয় ঋণদাতাদের হাতে থাকা অংশীদারির নিলামপ্রক্রিয়া। পাশাপাশি কথা ছিল, আপাতত পরিষেবা চালাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি দেবে ব্যাংক। কিন্তু সেই টাকা শেষ পর্যন্ত মেলেনি।

গত পাঁচ বছরে ভারতে অন্তত সাতটি বিমান কোম্পানি পরিষেবা গুটিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দামানিয়া, মোদিলুফৎ, সাহারা, এয়ার ডেকান, কিংফিশার। ছোট শহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে বিমানবন্দর ও অবকাঠামো তৈরি করছে ভারত সরকার। এই অবস্থায় জেটের এক দিনের জন্য ডানা গোটানোও ইতিবাচক নয় বলে মনে করে ভারতের সংশ্লিষ্ট মহল!

ভারতের বিমান মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, জেটকে আকাশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনায় সব রকম সাহায্য করবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।