Thank you for trying Sticky AMP!!

টাকা ফেরত পাচ্ছে না রূপালী

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। এসব টাকার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক সুদও পাচ্ছেই না,আবার মূল টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকটির সুদসহ পাওনা টাকার পরিমাণ ৮৫০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার তাগাদা দিয়েও আমানত হিসেবে রাখা টাকা ফেরত না পাওয়ার ঘটনাও আছে। এখন টাকা উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চায় রূপালী ব্যাংক। এ জন্য ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে রূপালী ব্যাংক বলেছে, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি আমানত হিসেবে ৮২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রূপালী ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সুদ ও আসল ফেরত দিতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো সাড়া মিলছে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ তারল্য সংরক্ষণের (সিআরআর) জন্য কলমানি, মেয়াদি আমানত, আন্তব্যাংক রেপো, রিভার্স রেপো, স্পেশাল রেপো এসুউরড লিকিউডিটি সাপোর্ট (এএলএস) মুদ্রাবাজারের তারল্যের উপাদান হিসেবে বিবেচিত। তাই মুদ্রাবাজারের প্রচলিত নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেয়াদ শেষেও আমানত ফেরত না দিলে সিআরআর সংরক্ষণে সমস্যা হয়। এ ছাড়া পারস্পরিক আস্থা বিনষ্ট হলে মুদ্রাবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকার পরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এ অবস্থায় মুদ্রাবাজারের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জমা রাখা টাকা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চায় রূপালী ব্যাংক।

রূপালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা আদায়ে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। এরপরও টাকা ফেরত আসছে না। তাই বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। এরপরও টাকা ফেরত না পেলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

>

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আমানত
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আমানতের টাকা ও সুদ ফেরত পাচ্ছে না রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটি

রূপালী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে সুদসহ রূপালী ব্যাংকের ৯৩৩ কোটি জমা আছে। এর মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে বারবার চিঠি দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশনে (বিআইএফসি) আটকে গেছে ৬৩ কোটি টাকা। টাকা ফেরত চেয়ে ১৩ বার চিঠি দিলেও বিআইএফসি সাড়া দেয়নি। এ ছাড়া পিপলস লিজিংয়ে ১৪৪ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ৬৪ কোটি টাকা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সে ৫১ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ১১৯ কোটি টাকা, ফিনিক্স ফাইন্যান্সে ২২ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্সে ১১২ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সে ৪৩ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে ২২৯ কোটি টাকা এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ২০ কোটি টাকা আটকে আছে রূপালী ব্যাংকের। টাকা ফেরত চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে দফায় দফায় চিঠি দিয়েও কোনো সুফল পায়নি রূপালী ব্যাংক। তবে হজ্ব ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্স কিস্তির টাকা ফেরত দিচ্ছে। আর ইউনাইটেড ক্যাপিটালে রাখা ২২ কোটি টাকার মেয়াদ এখনো পূর্ণ হয়নি।

এদিকে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে তার কাছ থেকে কবে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত।

বিআইএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম মোস্তফা বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। কারণ, ঋণের ৯৫ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, মেয়াদ শেষ হলে টাকা ফেরত দেওয়া প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। যারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তাদের তাগাদা দেওয়া হবে।