Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্যারিফ কমিশন আইন: নাম বদলাল, কাজ বাড়ল

সরকার

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের নামের সঙ্গে যুক্ত হলো ট্রেড শব্দটি। ফলে এখন থেকে সংস্থাটির নাম হবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তবে নাম বদলানোর সঙ্গে বাড়ল এর কাজের আওতা। সংস্থাটি এখন থেকে শুল্কনীতি পর্যালোচনাসহ নানা কাজ করবে।

অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এত দিন বিভিন্ন খাতে শুল্কহার নিয়ে ট্যারিফ কমিশন যেসব প্রস্তাব দিত, তার বেশির ভাগই অবাস্তবায়িত থাকত। নতুন আইনেও এই সংস্থার করা সুপারিশ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বলা হয়েছে, কমিশন যেসব সুপারিশ করবে, সরকার তা স্বীকৃতি দেবে এবং যথাযথভাবে বিবেচনা করবে।

এর মানে কি ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ প্রজ্ঞাপন আকারে সরকার প্রকাশ করে বাস্তবায়ন করবেই? এমন প্রশ্ন করা হলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সে রকম না। এ ক্ষেত্রে সরকারের হাত-পা একেবারে বেঁধে দেওয়া হয়নি। বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে আরও পর্যালোচনার দরকার ছিল। সে ক্ষেত্রে আরও বিলম্ব হতো। তিনি বলেন, নতুন সংশোধনীতে ট্যারিফ কমিশনের কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন পাকিস্তান ট্যারিফ কমিশনের উত্তরবর্তী একটি সংস্থা। ১৯৯২ সালে ট্যারিফ কমিশন আইন করে বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে এটি পুনর্গঠন করা হয়। ২০০৯ সালে ট্যারিফ কমিশন আইন সংশোধন করে এর ক্ষমতা ও কাজের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলে থাকার পর গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী পাস হয়। ২৮ জানুয়ারি এর প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়।

নতুন কাজ কী কী

ট্যারিফ কমিশন আইনের সংশোধনীতে বেশ কিছু নতুন কাজের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে শুল্কনীতি পর্যালোচনার পাশাপাশি রয়েছে বাণিজ্য চুক্তি; অ্যান্টিডাম্পিং, কাউন্টার ভেইলিং ও সেইফগার্ড শুল্ক; ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি, রুলস অব অরিজিন; শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শুল্কনীতি প্রণয়ন; বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; সুনির্দিষ্ট মেয়াদের সংরক্ষণমূলক শুল্ক আরোপ; বৈদেশিক বাণিজ্য পরিবীক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তারকারী নীতিমালা ও রীতিনীতি ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান।

এ ছাড়া ট্যারিফ কমিশন নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারদর পর্যবেক্ষণ করবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তিসম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা দেবে। বিশ্ব বাণিজ্যের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করবে। বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রভাব মূল্যায়ন করবে। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ভোক্তা ও জনসাধারণের স্বার্থে গণশুনানির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া তারা দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য নিয়ে গবেষণা করবে।

গবেষণা ও সমীক্ষাকাজে সহায়তার জন্য ট্যারিফ কমিশনে পরামর্শক ও গবেষণা সহায়তাকারী নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে আইনের সংশোধনীতে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন নিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কমিশন পরামর্শক ও সহায়তাকারী নিয়োগ দিতে পারবে।

গবেষণাকাজের জন্য বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় তথ্য ট্যারিফ কমিশনকে দেয়। এবার তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের ব্যবস্থা রাখা হলো আইনের সংশোধনীতে। এতে বলা হয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি নিয়ে তথ্য প্রকাশ করা যাবে।

সুপারিশ অবাস্তবায়িত

ট্যারিফ কমিশন সারা বছর নানা পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে যেসব সুপারিশ করে, তার বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হয় না। কমিশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তারা ১৫টি সুপারিশ করে, যার ৮টি বাস্তবায়িত হয়। পরের অর্থবছর কমিশন ১০টি সুপারিশ করে, যার মধ্যে ৫টি বাস্তবায়িত হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪টি সুপারিশের মধ্যে ৭টি বাস্তবায়ন করে সরকার।

ঘন ঘন চেয়ারম্যান বদল

১৯৭২ সালের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ট্যারিফ কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন ৪৮ জন চেয়ারম্যান। বেশির ভাগই দায়িত্ব পালন করেছেন খুবই অল্প সময়। যেমন বর্তমান চেয়ারম্যানের আগের চেয়ারম্যান নূর উর রহমান দায়িত্ব পালন করেন ২ মাস ১২ দিন। এরপর তাঁকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে বদলি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের কাজ বা বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বুঝে ওঠার আগেই অনেকের অবসর নেওয়ার সময় হয়ে যায়। অথবা বদলি হয়ে যান। ফলে সংস্থাটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারও নজর থাকে না। এ ছাড়া ট্যারিফ কমিশনের মতো একটি বিশেষায়িত সংস্থায় বাণিজ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগে সরকারের নজর ছিল না।

ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম বলেন, ট্যারিফ কমিশনকে আরও জোরালো ভূমিকায় রাখা যেত, যদি এটাকে সত্যিকার অর্থে একটি গবেষণা সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হতো। সে ধরনের জনবল সেখানে কখনোই ছিল না। আবার চেয়ারম্যান হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের বাণিজ্য বিষয়ে ততটা দক্ষতা ছিল, সেটাও বলা যাবে না। অনেক সময় ট্যারিফ কমিশন ছিল শাস্তিমূলক বদলির জায়গা।

উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধাগুলো অনেকটাই থাকবে না। হাতে সময় আছে আর ১০ বছর। এম এ তসলিম মনে করেন, অগ্রাধিকার সুবিধা যখন থাকবে না, তখন বাণিজ্যের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা বোঝার জন্য ট্যারিফ কমিশনের মতো সংস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।