Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের জট

প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঈদের লম্বা ছুটির কারণে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের চাপ পড়ছে। ঈদের এক সপ্তাহ পর যেসব পণ্য রপ্তানি হবে, সেগুলো এখন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে এনে রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপোতে। ফলে বেশির ভাগ ডিপোতে এখন রপ্তানি পণ্যের জট তৈরি হয়েছে।

কনটেইনার ডিপো সমিতির হিসাব অনুযায়ী গতকাল শনিবার ১৮টি ডিপোতে শুধু রপ্তানি পণ্যভর্তি মোট ১৫ হাজার কনটেইনার পড়ে ছিল। তবে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার মিলে গতকাল সব ডিপোতে মোট ৬৯ হাজার কনটেইনার পড়ে ছিল। এসব ডিপোতে কনটেইনার রাখার স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৬৫ হাজারটি। সেই হিসাবে ধারণক্ষমতার চেয়ে এখন চার হাজার কনটেইনার বেশি রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি ডিপোর সামনে রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে প্রায় ৩৫০টি কাভার্ড ভ্যান অপেক্ষা করছে।

ঈদ উপলক্ষে এবারে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো কমবেশি ৮ থেকে ১০ দিনের ছুটি দিয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কারখানায় গত শুক্রবার থেকে ছুটি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ কারখানা খুলবে ১৮ আগস্ট। ছুটির সময় যেসব পণ্য রপ্তানি হওয়ার কথা, সেগুলো ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের ডিপোতে পাঠিয়ে দিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। তাতেই এই পণ্যজট তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, এবারে ঈদ সামনে রেখে লম্বা ছুটি দেওয়া হয়েছে। ছুটির সময় যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আগেভাগেই রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। এখন সময়মতো যাতে পণ্য রপ্তানি হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বাকি ১০ শতাংশ ঢাকার কমলাপুর ডিপো বা আইসিডি এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) থেকে কনটেইনারে ভরে সরাসরি বন্দরে পাঠানো হয়।

>১৮টি কনটেইনার ডিপোতে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার মিলে মোট ৬৯ হাজার কনটেইনার রয়েছে।

এদিকে চাপ মোকাবিলায় বন্দর কর্তৃপক্ষও পোশাকশিল্পের রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা শিথিল করেছে। বন্দর কর্মকর্তারা জানান, পোশাকশিল্পের পণ্য রপ্তানিতে সুবিধা দিতে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই শিথিলতা বজায় থাকবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বন্দর। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনো জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে রপ্তানিমুখী পণ্যের কনটেইনার বন্দরের ভেতরে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় বন্দরে প্রবেশের সুযোগ থাকবে না।

রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানিকারকেরা ডিপোতে ফরোয়ার্ডারদের হাতে রপ্তানি পণ্য বুঝিয়ে দেয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এখন ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বাড়ছে। কয়েকটি ডিপোর সামনে রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি পৌঁছানোর পরও তা খালাস করে কনটেইনারে বোঝাই করতে তিন-চার দিন লেগে যাচ্ছে। ছুটি চলাকালে একটি নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার ব্যবস্থাপনার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে না পারলে পণ্য জাহাজীকরণ বিলম্ব হতে পারে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, প্রতিবছর ঈদের সময় ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ বাড়ে। সে অনুযায়ী কিন্তু ডিপোর সংখ্যা বাড়ছে না। তাই পণ্যজট তৈরি হচ্ছে। সময়মতো পণ্য রপ্তানি নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের চাপ মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক কাজ হচ্ছে। আজও (শনিবার) পাঁচটি জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সব কটি জাহাজের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করে পাঠানো হচ্ছে। রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।

রপ্তানি পণ্য পাঠানোর কাজ ছাড়াও ডিপোগুলো ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য কনটেইনার থেকে খুলে আমদানিকারকদের হাতে বুঝিয়ে দেয়। পাশাপাশি খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে থাকে। চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপোতে ৪৫ হাজার খালি কনটেইনার, ৯ হাজার আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং ১৫ হাজার রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার রয়েছে, যা স্বাভাবিক সময়ের প্রায় দ্বিগুণ।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী আগের দিন সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডিপোগুলো থেকে আড়াই হাজার কনটেইনার পণ্য বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববারও বন্দর জেটি থেকে পাঁচটি জাহাজ রপ্তানি পণ্য নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ঈদের দিন বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে ঈদের দিন ছাড়া এই ছুটির সময়ে প্রতিদিনই বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে জাহাজ ছেড়ে যাবে।

পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়া অনুযায়ী রপ্তানিমুখী কারখানা থেকে পণ্য প্রথমে কাভার্ড ভ্যানে করে বেসরকারি ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য নামিয়ে ডিপোর শেডে রাখা হয়। এরপর কনটেইনারে বোঝাই করা হয়।