Thank you for trying Sticky AMP!!

তরলের বিপদ, গুঁড়ার সুসময়

তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়ার খবরে ঢাকার খুচরা বাজারে তরল দুধের চাহিদা কমেছে। অনেকে তরল দুধ কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছেন। বিপরীতে বেড়েছে গুঁড়া দুধের চাহিদা।

অবশ্য গুঁড়া দুধ কিনতে সাধারণ মানুষকে আগের চেয়ে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। বাজেটে গুঁড়া দুধের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দোকানমালিকেরা জানান, বিদেশি কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম এখন কেজিপ্রতি ৫৮০ থেকে ৬১০ টাকা। অন্যদিকে দেশীয় ব্র্যান্ডের কয়েকটি গুঁড়া দুধের কেজিপ্রতি দর ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিজান স্টোরের বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, বাজেটের আগে ও পরে দাম বেড়েছে। আগের কেনা দুধ বিক্রি শেষ করে এখন বাড়তি দামের দুধ বিক্রি করেছেন তাঁরা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

এবারের বাজেটে দেশীয় খামারিদের সুরক্ষায় গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের হিসাবে, গত নভেম্বরে বিশ্ববাজারে পূর্ণ ননিযুক্ত গুঁড়া দুধের দাম টনপ্রতি ২ হাজার ৬০০ ডলারে নেমেছিল। মার্চে তা ৩ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কর বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে তিন মাসে গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ৯০ টাকার মতো বেড়েছে।

তরল দুধের চাহিদা কমার খবর জানিয়েছেন বিপণনকারীরা। তাঁরা বলছেন, প্রায় এক মাস ধরে তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা পাওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে দ্বিধা তৈরি রয়েছে। এ কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় তাঁরা দুধ সংগ্রহ কমিয়েছেন। খুচরা দোকানমালিকেরাও একই কথা বলছেন। কাজীপাড়ার খুচরা দোকানের মালিক মফিজুল ইসলাম বলেন, গত রোববার হাইকোর্ট তরল দুধের উৎপাদন ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর তিনি আর দোকানে তরল দুধ রাখেননি। গুঁড়া দুধ আছে। মানুষ সেটাই বেশি কিনছে।

>

তরল দুধ নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর গুঁড়া দুধের চাহিদা বেড়েছে
অনেকে তরল দুধ রাখা বন্ধ করে দিয়েছেন
কয়েকটি ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে
গুঁড়া দুধ কিনতে সাধারণ মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে

সার্বিকভাবে দেশে গুঁড়া দুধ আমদানি বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে দেশীয় দুধ উৎপাদন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার টন গুঁড়া দুধ আমদানি হয়েছে। পাঁচ বছরের হিসাবে গুঁড়া দুধ আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, পাঁচ বছরে তরল দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানুষের মধ্যে দুধ খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। এর পাশাপাশি দুধের বাণিজ্যিক ব্যবহারও বেড়েছে। এ দুই মিলে দেশে দুধের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী একজন মানুষের দৈনিক ২০০ মিলিলিটার দুধ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেটা অত্যন্ত কম। যদিও এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আইসক্রিম, মিষ্টি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি খাদ্যপণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। এতেও দুধের চাহিদা বাড়ছে।

তরল দুধ নিয়ে বিতর্কের সমাধান কী, জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, দুধে সিসা ও অ্যান্টিবায়োটিক মাত্রার চেয়ে বেশি আছে কি না, সেটা একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে দেশে-বিদেশে পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর যদি পাওয়া যায়, সেটার উৎস খুঁজে বের করে সমাধানের ব্যবস্থা করা দরকার।

এদিকে দুই দিনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে দুধ বিক্রির সুযোগ পেয়েছে মিল্ক ভিটা, প্রাণ ও ফার্মফ্রেশ ব্র্যান্ড।