Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে ফিরতে চান পি কে হালদার, আদালতে আবেদন

প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সিংহভাগ ঋণের সুবিধাভোগী প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার দেশে ফিরতে চান। অর্থ উদ্ধারের জন্য আদালতের জিম্মায় ও তত্ত্বাবধানে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। বিদেশ থেকে পি কে হালদারকে নির্বিঘ্নে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ চেয়ে গত রোববার উচ্চ আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

Also Read: পি কে হালদারসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দই থাকবে

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার আদালত বলেছেন, পি কে হালদার কবে, কখন ও কোন ফ্লাইটে আসবেন—এসব সুনির্দিষ্ট তথ্য আইএলএফএসএলের পরিচালনা পর্ষদ আদালতকে জানাবে। তখন আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল, দুদকের আইনজীবী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, দুদকসহ আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। আদেশে আরও বলা হয়, পি কে হালদারের ফ্লাইট-সংক্রান্ত ওই সব তথ্য পাওয়ার পর বিষয়টি আইএলএফএসএলের আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করতে পারবেন।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক খান গত রোববার হাইকোর্টে আবেদনটি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম।

পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পি কে হালদার দেশে ফিরতে চান ও অর্থ পরিশোধ করতে চান বলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংকে জানিয়েছেন। তবে তাঁর দেশে ফেরায় ঝুঁকি আছে, সে জন্য তিনি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চান।

পরিচালনা পর্ষদ ওই চিঠি অনুমোদন করে, যা দাখিল করা হয়। শুনানি নিয়ে পি কে হালদার কবে ও কোন সময় ফিরবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলেছেন আদালত। এসব তথ্য আসার পর অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদকের উপস্থিতিতে আদেশ দেবেন আদালত।

Also Read: পি কের সঙ্গীরা বহাল তবিয়তে

জানা গেছে, পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদের কাছে লিখিত আবেদন দেন, যাতে বলা হয় তিনি দেশে ফিরতে চান এবং পৌঁছার পর আইএলএফএসএল অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করতে চান। সে জন্য দুদক, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেন তাঁর দেশে আসায় কোনো বাধা তৈরি না করে। এরপর হাইকোর্টে আবেদনটি করা হয়। এতে যেকোনো শর্তে পি কে হালদারকে আদালতের জিম্মায় নিয়ে আইএলএফএসএল থেকে তাঁর ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া অর্থ ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়ার আরজি রয়েছে।

জানা গেছে, পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নামে-বেনামে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এ কারণে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং গ্রাহকের আমানতের টাকাও ফেরত দিতে পারছিল না। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে শোরগোল শুরু হলে গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান পি কে হালদার। পি কে হালদারের কারণে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়ে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো একপ্রকার দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় টাকা ফেরত পেতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একাধিক গ্রাহক আদালতের শরণাপন্ন হন। পরে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেন।

Also Read: ৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট

আদালতের আদেশে চেয়ারম্যান হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ দেখেন পি কে হালদার লুটপাট করে প্রতিষ্ঠানটিকে এতটাই খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছেন, যেটিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় টেনে তোলা সম্ভব নয়। পরে দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এরপর হাইকোর্ট গত মার্চে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে নিয়োগ দেন। এরপর পি কে হালদারের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং যোগাযোগ স্থাপন করে। একপর্যায়ে পি কে হালদার দেশের বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কেলেঙ্কারির দায় স্বীকার করে দেশে ফিরে এসে অর্থ ফেরত দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ জন্য আবেদনও করেন। ওই আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পক্ষে আদালতের জিম্মায় পি কে হালদারকে দেশে ফেরত আসার সুযোগ দেওয়ার আবেদন করা হয়।

Also Read: প্রশান্তর মুঠোয় আরও তিন

পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন মূলত হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ, নিউ টেক এন্টারপ্রাইজের নামে। আর টাকা বের করেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে। একইভাবে পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিকেও (বিআইএফসি) ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছেন পি কে হালদার। পিপলস লিজিং অবসায়ন হচ্ছে, অন্যগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব অপকর্মের সময় তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

Also Read: যে কারণে ঋণের সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা যায়নি