Thank you for trying Sticky AMP!!

নিউইয়র্কের সাড়ে পাঁচ গুণ দাম দেশে

>

• এক থালা পুষ্টিকর খাবার
• বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন নিউইয়র্কবাসীকে এক থালা খাবার কিনতে ১.২০ ডলার ব্যয় করতে হয়।

এক থালা সাধারণ মানের পুষ্টিকর খাবার কিনতে একেক দেশের মানুষকে একেক ধরনের দাম দিতে হয়। সেই থালায় থাকবে একেবারে সাধারণ মানের ভাত, ডাল, শিম, মটরশুঁটি বা স্যুপজাতীয় খাবার। এই খাবার কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একজন বাসিন্দার ১ ডলার ২০ সেন্ট খরচ হয়। আর বাংলাদেশের একজন নাগরিক সেই সাধারণ মানের এক থালা খাবার যদি এ দেশে কিনে খেতে চান, তাহলে তাঁকে খরচ করতে হবে ৬ ডলার ৫৬ সেন্ট। আয় সামর্থ্যের বিবেচনায় নিউইয়র্কবাসীর চেয়ে প্রায় সাড়ে ৫ গুণ বেশি দামে খাবার খেতে হয় একজন বাংলাদেশিকে।

সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) প্রকাশিত ‘ট্রু কস্ট অব আ প্লেট অব ফুড’ বা ‘এক থালা খাবারের প্রকৃত দাম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে ৫২টি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিকের আয় সামর্থ্যের ভিত্তিতে শিল্পোন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরবাসীর খাদ্যমূল্যের তুলনা করা হয়েছে। ওই তালিকার তলানিতে থাকা দক্ষিণ সুদানের একজন নাগরিককে নিউইয়র্কের ওই মানের খাবার খেতে প্রায় ৩৫০ ডলার খরচ করতে হবে, যা একজন নাগরিকের দুই দিনের আয়ের সমান। এ ছাড়া প্রতিবেদনটিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা, দারিদ্র্যের হার, আর্থসামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সাধারণত ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে বা পিপিপি ডলারে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা তুলে ধরা হয়।

বিশ্বের ৫২টি উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যে খাবার মূল্যের তুলনা করা হয়েছে, সেখানে খাবার কেনার সামর্থ্যের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হলো বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশের বেশি আছে। এর ফলে মৌলিক শিক্ষা, দারিদ্র্য হ্রাস, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। তবু বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, বন্যা ও সাইক্লোনের মতো দুর্যোগ হয়। এখনো ২ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের অর্ধেকই ক্ষুধার্ত থাকে। আর দুই-তৃতীয়াংশ শিশু অপুষ্টির কারণে খর্বাকৃতির হয়ে জন্মায় বাংলাদেশে। মিয়ানমার থেকে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশুও অপুষ্টিতে ভুগছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাবারের মান এখানে বড় কারণ। নিউইয়র্কে যে মানের খাবার কম দামে খাওয়া যায়, সেই মানের খাবার কিনতেও এ দেশে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। আমরা তুলনামূলক কম দামে এক বেলা খাবার খাই। কিন্তু সেই খাবারের মান ভালো না। অনেকটা কোনো রকমে খাওয়ার মতো খাই। তাই নিউইয়র্ক শহরের পুষ্টিকর একই মানের খাবার খেতে বেশি খরচ করতে হবে।’ বর্তমানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে খাবারের উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থা অনেক বেশি সুসংগঠিত। এই ব্যবস্থা থেকে অর্থনীতি একধরনের সুফল পায়। এ জন্য ভোক্তারা ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সুলভে খাবার খেতে পারেন।

ডব্লিউএফপির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের তুলনা রয়েছে। এই পাঁচ দেশের মধ্যে অবশ্য বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষেরা আয়ের সামর্থ্যের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে খাবার কিনতে পারেন। নিউইয়র্কের একজন নাগরিকের মতো এক থালা সাধারণ মানের খাবার কিনতে ভারতের একজন নাগরিককে ৭ ডলার ৬০ সেন্ট, পাকিস্তানে ১১ ডলার ৯০ সেন্ট, নেপালে ১৫ ডলার ৭৫ সেন্ট এবং আফগানিস্তানে ২৮ ডলার ৪ সেন্ট খরচ করতে হয়।

ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে ভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভারত বর্তমানে ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সম্প্রতি ফ্রান্সকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে দেশটি। উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি ভারতীয় দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠছে। তবু দারিদ্র্যের কারণে ভারতে এখনো মাথাপিছু জিডিপি অনেক কম। সারা বিশ্বে যত মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে, এর চার ভাগই ভারতের অধিবাসী।

পাকিস্তান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হলেও অর্ধেক জনগোষ্ঠীই তাদের আয়ের পুরোটাই খাবার কিনতে খরচ করে থাকে। দেশটির ২৫ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির। স্কুলে যাওয়ার প্রবণতাও এই অঞ্চলের অন্য দেশের তুলনায় কম। আর নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই মানবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

একেকটি দেশের নাগরিকদের আয় সামর্থ্য তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে নিউইয়র্কবাসীর সঙ্গে যুদ্ধকবলিত দক্ষিণ সুদানের তুলনা করা হয়েছে। দক্ষিণ সুদান ৫২টি দেশের তালিকায় সর্বশেষ অবস্থানে আছে। নিউইয়র্কের একজন নাগরিককে যেখানে সাধারণ মানের এক থালা খাবার কিনতে ১ ডলার ২০ সেন্ট করতে হয়, যা ওই ব্যক্তির দৈনিক আয়ের দশমিক ৬ শতাংশ বা আধা শতাংশের একটু বেশি। অন্যদিকে দক্ষিণ সুদানের একজন নাগরিককে একই মানের এক থালা খাবার কিনতে গড়ে ৩৪৮ ডলার ৩৬ সেন্ট খরচ করতে হবে। এর মানে হলো, সুদানের একজন নাগরিককে নিউইয়র্ক শহরের মতো সাধারণ মানের এক থালা খাবার কিনতে হলে দুই দিন পরিশ্রম করে আয় করতে হবে।

ডব্লিউএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওপরে যে আটটি দেশ আছে সেগুলো হলো পেরু, লাওস, জর্ডান, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা,