Thank you for trying Sticky AMP!!

নির্বাচনের বছর, তাই কোরবানি বেশি হবে

দেলোয়ার হোসেন
>দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাত চামড়াশিল্পের জন্য পশুর চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম পবিত্র ঈদুল আজহা। এবারের ঈদে চামড়ার দাম, সংগ্রহের প্রস্তুতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।


প্রথম আলো: চামড়ার বাজার পরিস্থিতি এখন কেমন? দাম কি ভালো পাওয়া যাচ্ছে?

দেলোয়ার হোসেন: বাজার পরিস্থিতি এখন খুব একটা ভালো নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে ট্যানারিমালিকেরা যে দর ঘোষণা করেছেন, এখন চামড়া মোটামুটি একই দরে বিক্রি হচ্ছে। এবারের ঈদে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বর্গফুটপ্রতি ৫ টাকা কম। একইভাবে সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ দর আগের বছরের চেয়ে দুই টাকা কম।

প্রথম আলো: তার মানে হলো, চামড়ার বাজার এখন ভালো নয়।

দেলোয়ার হোসেন: ঠিক তাই। ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ভালো নয়। তাঁদের রপ্তানি আয় কমে গেছে। ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

প্রথম আলো: তাহলে আকারভেদে গরুর চামড়ার দাম এখন কত হতে পারে?

দেলোয়ার হোসেন: বড় গরুর চামড়ার আকার প্রায় ৩৫ বর্গফুট পর্যন্ত হয়। ২৬-২৮ বর্গফুট আকারের চামড়াকে মাঝারি হিসেবে ধরা হয়। আর ছোট গরুর চামড়ার আকার হয় সাধারণত ১৬-১৮ ফুট। ১৮ ফুটের একটি চামড়া এখন ৯০০ টাকা, ২৬ ফুটের চামড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ৩৫ ফুটের চামড়া ১ হাজার ৭৫০ টাকার মতো দাম আসে। অবশ্য চামড়া কয়েক হাত ঘুরে তারপর আড়তে আসে। তাতে দাম কিছুটা বেড়ে যায়।

প্রথম আলো: চামড়া সংগ্রহে এবার আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

দেলোয়ার হোসেন: ট্যানারিমালিকদের কাছে আমাদের অনেক টাকা বকেয়া। সাধারণত প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগে তাঁরা সিংহভাগ অর্থ পরিশোধ করেন। বড় ট্যানারিগুলো প্রায় পুরো টাকাই ঈদের আগে দিয়ে দেয়। গত কয়েক বছরের মতো এ বছর তারা উল্লেখযোগ্য হারে পাওনা পরিশোধ করছে না। আর মাত্র দুই দিন ব্যাংক খোলা আছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, তারা কতটুকু অর্থ পরিশোধ করবে। তাই এ নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি।

প্রথম আলো: কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে চামড়ার দাম কমছে। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?

দেলোয়ার হোসেন: হাজারীবাগের কারণ ছিল পরিবেশদূষণ। এরপর ট্যানারিগুলো সাভারে চামড়াশিল্প নগরে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেও দূষণ বন্ধ হয়েছে বলা যায় না। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। অবকাঠামো পরিপূর্ণতা পায়নি। এসব কারণে চামড়ার দাম কমতি।

প্রথম আলো: এ বছর পশু জবাই ও চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ কি বাড়বে, না কমবে? আপনারা কী মনে করছেন?

দেলোয়ার হোসেন: আমি মনে করি, এবার পশু কোরবানি বেশি হবে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এবার নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীরা নিজ এলাকায় গিয়ে বাড়তি সংখ্যায় পশু কোরবানি দেবেন। এতে আমাদের ধারণা, এ বছর চামড়া সংগ্রহ বেশি হবে।

প্রথম আলো: ঈদুল আজহায় সারা বছরের কত অংশ চামড়া সংগৃহীত হয়?

দেলোয়ার হোসেন: আমাদের ধারণা, মোট চামড়ার ৫০ শতাংশের বেশি পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে। এ সময় চামড়ার মানও ভালো থাকে। কারণ কোরবানির গরু হৃষ্টপুষ্ট হয়।  

প্রথম আলো: বাংলাদেশি চামড়ার মান কেমন?

দেলোয়ার হোসেন: উপমহাদেশের সেরা চামড়া আমাদের। কারণ এ দেশে গরুর যত্ন নেওয়া হয়। নিয়মিত গোসল করানো হয়। গরুকে মশার কামড় থেকে রক্ষার জন্য মশারিও ব্যবহার করা হয়। চামড়ায় ঘা থাকে কম। সব মিলিয়ে এ দেশের চামড়ার মান ভালো।

প্রথম আলো: কয়েক বছর তো লবণের দাম বাবদ চামড়া সংরক্ষণে ব্যয় বেড়েছে। এ বছর লবণের দাম কেমন?

দেলোয়ার হোসেন: ৭৪ কেজির এক বস্তা লবণের দাম কয়েক দিন আগেও ৮৪০ টাকা ছিল। ইতিমধ্যে সেটা ১০০ টাকা বেড়েছে। গত বছর একই লবণ ১ হাজার ৩০০ টাকা বস্তা হয়েছিল। এবার ট্যানারিমালিকেরা টাকা দিলে সবাই যদি একসঙ্গে লবণ কিনতে চায়, তখন কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না। এ বছর নাকি প্রচুর লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু কিনতে গেলেই মিলমালিকেরা বাড়তি দাম চান।

প্রথম আলো: চড়া দামের কারণে কি চামড়ায় লবণ ব্যবহার কম করা হতে পারে?

দেলোয়ার হোসেন: একটা বড় চামড়ায় ১০-১২ কেজি লবণ লাগে। এক কেজি লবণের দাম এখন প্রায় ১৩ টাকা। লবণ দেওয়া চামড়া তিন থেকে সাড়ে তিন মাস রেখে দেওয়া যায়। কেউ যদি খরচ বাঁচাতে কম পরিমাণে লবণ ব্যবহার করে, তাহলে চামড়ার মানের ওপর তো প্রভাব পড়বেই।

প্রথম আলো: প্রতিবছর শোনা যায়, চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা কতটুকু সত্যি?

দেলোয়ার হোসেন: আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কিছু চামড়া ভারতে যেত। কয়েক বছর ধরে সীমান্তে বিজিবির কড়া পাহারার কারণে সেটা কমেছে। এবারও আমরা এটা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সরকার পাচার রোধে কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার ভালো না থাকায় ভারতের ব্যবসায়ীরাও চামড়া নিতে খুব বেশি আগ্রহী হবেন বলে মনে হয় না। অবশ্য তাঁদের পাদুকার অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক বড় এবং অনেক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ।