Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঁচ কারণে বেড়েছে সিমেন্টের দাম

সিমেন্ট বিক্রির দোকানে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গত মঙ্গলবার বাংলামোটরে। ছবি: প্রথম আলো

নির্মাণকাজের উপকরণ রডের পর এবার বাড়ল সিমেন্টের দাম। সিমেন্ট কোম্পানিগুলো ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বাড়িয়েছে ২০ টাকা। গত সোমবার থেকেই সারা দেশে এই বাড়তি দামে সিমেন্ট বিক্রি শুরু হয়েছে।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, সিমেন্ট খাতের পাঁচটি কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। বন্দরে জাহাজজটের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে ক্লিংকারের দামও। আবার মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে উৎপাদিত সিমেন্ট পরিবহনেও খরচ বেড়েছে। ডলারের বিনিময়মূল্যও বেড়েছে। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সিমেন্টের ব্যাগের দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এই খাতে নিত্যনতুন বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে প্রস্তুত পণ্য পরিবহন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই খরচ বেড়েছে। এ কারণে গত অক্টোবর থেকেই সিমেন্ট কোম্পানিগুলো লোকসান দিয়ে আসছে। এখন প্রতি বস্তা সিমেন্টে বাড়তি খরচ হচ্ছে কোম্পানিভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাড়তি খরচের একাংশ সমন্বয় করা হয়েছে। এটিকে দাম বাড়ানো হিসেবে দেখা উচিত নয়। খরচ সমন্বয় না করলে এই বড় খাতে বিপর্যয় হবে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম বাড়ার আগে মানভেদে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হতো ৩৪৫ থেকে ৩৯০ টাকা। এখন প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৬৫ থেকে ৪১০ টাকা।

চট্টগ্রামের চকবাজারের ভান্ডার ট্রেডিংয়ের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চারটি কোম্পানির সিমেন্টের প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) তাঁরা খুচরা পর্যায়ে ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা বিক্রি করতেন। দাম বাড়ার পর এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩৯০ থেকে ৪১০ টাকা। দাম বাড়ার বিষয়টি ক্রেতাদের জানাোনা হয়েছে।

সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতি ও উদ্যোক্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে সিমেন্ট খাতে উৎপাদনে রয়েছে ৩৪ কারখানা। এগুলো ২০১৭ সালে সম্মিলিতভাবে উৎপাদন করেছে প্রায় আড়াই কোটি টন সিমেন্ট। এ হিসেবে দাম বাড়ায় সিমেন্ট ব্যবহারকারীদের বছরে বাড়তি ব্যয় করতে হবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে বছরে সিমেন্টের বেচাকেনা দাঁড়াবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির তথ্যানুসারে, ২টি কারখানা ক্লিংকার উৎপাদন করলেও বাকি ৩২টি কারখানা ক্লিংকারসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি করেই সিমেন্ট প্রস্তুত করে। সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল হলো ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই পাঁচটি কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ টন। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয় ১ কোটি ৪৫ লাখ টন। উদ্যোক্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম বেড়েছে টনপ্রতি চার থেকে পাঁচ ডলার। ক্লিংকার রপ্তানিকারক দেশ চীন ক্লিংকার আমদানি শুরু করেছে। এতে চাপ পড়ছে বৈশ্বিক বাজারে। মূলত চীনের আমদানিই বিশ্ববাজারের ক্লিংকারের দাম  বাড়িয়ে দিয়েছে।

সিমেন্টের উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি  পরিবহন খরচও বেড়েছে। মহাসড়কে গত নভেম্বর থেকে পণ্যবাহী গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে এখন দুই গাড়ির সিমেন্ট তিন গাড়িতে পরিবহন করতে হচ্ছে। যেমন ছয় চাকার ট্রাকে আগে যেখানে ২০ টন সিমেন্ট পরিবহন করা হতো, এখন সেখানে পরিবহন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টন। আবার দশ চাকার ডাম্প ট্রাকে আগে যেখানে ২৫ টন পরিবহন হতো, এখন সেখানে হচ্ছে সাড়ে ১৭ টন। এই খরচও যুক্ত হচ্ছে সিমেন্টের দামে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিডব্লিউ রিসার্চ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সিমেন্ট মার্কেট রিপোর্ট ২০১৭’ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নে সিমেন্টের ব্যবহার ৩৫ শতাংশ। ব্যক্তি উদ্যোগে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার ৪০ শতাংশ। আবাসন খাতে ২৫ শতাংশ। দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে এই তিনটি খাতে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি আব্দুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে রডের দাম টনপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। এখন নতুন করে যুক্ত হলো সিমেন্টের বাড়তি দাম। নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়লেও ফ্ল্যাটের দাম বাড়ছে না। এতে আবাসন খাতে নতুন করে বিরূপ প্রভাব পড়বে।