Thank you for trying Sticky AMP!!

পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বড় সাঘাটিয়া গ্রামের গুদার বিলে দুজন লোক নিয়ে পানিফল তুলছেন কৃষক বাদল মিয়া (ডানে)। গতকাল ছবিটি তুলেছেন সোয়েল রানা

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় মৌসুমি পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। এরই মধ্যে লাভজনক এই ফল চাষ করে অনেক চাষির পরিবারে সুদিন ফিরেছে। উপজেলার খাল-বিল–জলাশয়জুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে পানিফলের গাছ।

কাকডাকা ভোরে ভ্যানগাড়ি-ভটভটিতে বস্তায় ভরে এই পানিফল বিক্রির জন্য নিচ্ছেন বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারে। এক মাস ধরে সাতসকালে চাষি আর ব্যাপারীদের আনাগোনায় সরগরম এই বাজার। ভোরের লাল সূর্যের আভা মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেনাবেচা শেষ এখানে। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাতটার মধ্যেই গড়ে ১০০ মণ পানিফলের কেনাবেচা হয় চাষিবাজারে।

 গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অনেক বছর ধরেই এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পানিফল চাষ হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই এ ফলের চাষ বাড়ছে। গত বছর শীত মৌসুমে উপজেলায় পানিফল চাষ হয়েছিল ৭০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ৭৫০ হেক্টর বিল-জলাশয়ে এই ফলের চাষ হয়েছে।

 গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মুহাম্মদ আহসান শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, একসময়ের পতিত থাকা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বিল-জলাশয়ে চাষিরা পানিফলের সঙ্গে মাছ চাষও করছেন।

 চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জলাশয়ে চাষ হওয়া পানিফল স্থানীয় চাষিদের কাছে ‘পানি শিঙাড়া’ নামেও পরিচিত। এ ফলের কোনো বীজ নেই। নিচু এলাকার বিল-জলাশয়ে মৌসুমি ফসল হিসেবে পানিফল চাষ হয়। এ ফল পানিতে ভরপুর এবং তাতে প্রচুর খনিজ উপাদান থাকে। 

গাবতলীর নেপালতলী ইউনিয়নের গাড়ামারা বিলের ২৫ বিঘা জলাশয়ে পানিফল চাষ করেছেন তেরপাখি গ্রামের মুকুল হোসেন (৪০)। তিনি বলেন, ‘২৫ বিঘা বিল এক বছরের পত্তনির জন্য মালিকদের দিতে হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। পানিফল চাষে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এক মাস ধরে খেত থেকে পানিফল তুলছি। ইতিমধ্যে ১০০ মণ পানিফল বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছি।’

উপজেলার গোড়দহ বিলে গত বৃহস্পতিবার খেত থেকে পানিফল তুলছিলেন চাষি ফটু মিয়া (৩৮)। তিনি বলেন, একসময় সহায়সম্বল কিছুই ছিল না। পানিফল চাষে এখন সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

গাবতলীর গোড়দহ বিলের ৩৫ বিঘা জলাশয়ে এবার পানিফল চাষ করেছেন শহিদুল ইসলাম (৫২)। তিনি বলেন, ‘গত দুই মৌসুমে খরচ বাদে পানিফল চাষ করে ৫ লাখ টাকা লাভ করেছি। এবার ফলন ও বাজারমূল্য দুটোয় ভালো। তাই গতবারের চেয়ে বেশি লাভের আশা করছি।’

এক মাস ধরে প্রতিদিন ভোরে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারে পানিফলের বাজার বসছে। চাষিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় মুখরিত চাষিবাজার।

 দিনাজপুরের হিলি থেকে পানিফল কিনতে এ বাজারে এসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী শ্যামল রায়। ২০ মণ পানিফল কিনে ভ্যানে করে রেলস্টেশনে যাচ্ছিলেন তিনি ট্রেন ধরার জন্য। শ্যামল বলেন, লাল রঙের হাইব্রিড পানিফল প্রতি মণ ৪৫০, সবুজ রঙের তাজা পানিফল ৬৫০, পাকা পানিফল ৭৫০ এবং কয়েক দিন আগে তোলা কালো রঙের পানিফল মণ ৪০০ টাকা দামে কিনেছেন।

চাষিবাজারের পানিফলের ব্যাপারী বশির উদ্দিন বলেন, এক মাস আগে মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাকা পানিফল ১ হাজার ৮০০ এবং লাল রঙের পানিফল প্রতি মণ ১ হাজার টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। এখন আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

চাষি রায়হান আলী বলেন, প্রতি মণ পানিফল ৪০০ টাকার কমে বিক্রি করলে চাষিদের লোকসান হবে। গত বছর মৌসুমের শেষেও এই বাজারে প্রতি মণ পানিফল মানভেদে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে।