Thank you for trying Sticky AMP!!

পেঁয়াজের চোটপাটে ক্রেতা দিশেহারা

পেঁয়াজের দামের দ্বিশতক দেশে প্রথম। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৫ নভেম্বর। ছবি: শাকিলা হক

দেশজুড়ে বাজারে অভিযান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস, বড় চালান আসার খবর—কোনো কিছুই থামাতে পারছে না পেঁয়াজের দরবৃদ্ধিকে। ডাবল সেঞ্চুরি করে এখনো নটআউট পেঁয়াজ। বাঙালি রান্নার উপাদেয় এই উপকরণটির চোটপাটে ক্রেতারা দিশেহারা।

রাজধানীর বাজারে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই গতকালের চেয়ে বাড়তি পেঁয়াজের দাম। কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও, কলাবাগান, আগারগাঁওয়ের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের পেঁয়াজই কেজিতে ২০০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের দাম ২২০ টাকা ছাড়িয়েছে।

দেশি পেঁয়াজের মতোই লাফিয়ে বেড়েছে মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজের দাম। গতকালের চেয়ে আজ সব পেঁয়াজেরই দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। এমনকি চীনা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে।

পেঁয়াজের এই দ্বিশতক দেশে প্রথম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকায় উঠেছিল। সেটাই ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ দর।

খিলগাঁওয়ের গৃহিণী শামীম আরা বলেন, সকালে পেঁয়াজ কিনতে বের হয়েছিলেন। দুই দোকান থেকে ফেরত আসতে হয় তাঁকে। পেঁয়াজ নেই। পরে একটি দোকানে গিয়ে পেঁয়াজ পান। ২০০ টাকা কেজিতে ১ কেজি পেঁয়াজ নেন তিনি। দোকানি তাঁকে জানান, আগে কিনে রেখেছিলেন বলে এই দামে পেয়েছেন।

কলাবাগানে খণ্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ করেন রুমানা। তিনি বলেন, ‘আফা পিয়াজ কিনতে পাঠাইছিলেন। আড়াই শ টাকা কেজি শুইনা ফিরা আসছি।’

আগারগাঁওয়ে বাসিন্দা সোবহান আলম বলেন, ‘ছুটি থাকায় শুক্রবারই বাজার করি। বাজারে ২০০ টাকা নিচে কোনো পেঁয়াজ নেই। দেশিটা ২২০ টাকা কেজি চায়।’

পেঁয়াজের আকাশচুম্বী দামের কারণে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ ব্যাপক চাপে পড়েছে। সকালে কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম শুনে মলিন মুখ করে চলে যাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অনেককে এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনে ফিরে যেতে দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের জোগান নেই। তাঁরা জানান, দাম বেশি বলে বাজারে ক্রেতাও কম।

এ বিষয়ে আজ সকালে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে পরে মন্তব্য করবেন তিনি। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দেশে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আমদানিও হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহ বেশ ভালো হবে বলে আশা করা যায়।

ভারত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি ন্যূনতম মূল্য ৮৫০ মার্কিন ডলার বেঁধে দেয়। এর পর থেকে দেশের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় দেশটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানিতে সিটি, মেঘনা ও এস আলম গ্রুপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করে ১৪ অক্টোবর। এরপর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বড় চালান আসছে।

২৮ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দু-এক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বড় চালান দেশে পৌঁছাবে। দাম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এরপর ১৭ দিন কেটেছে। বড় ধরনের চালানের খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) সদস্য মো. আবু রায়হান আলবিরুনি বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমবে। ২৩ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিসর ও তুরস্ক থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। কোনো বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

তাহলে পেঁয়াজের কী সমস্যা? এ বিষয়ে জানতে গত কয়েক দিনে তিনজন আমদানিকারক ও চারজন পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ কখন এসে বাজার সয়লাব করে ফেলে, সেই ভয়ে আমদানিকারকেরা অন্য দেশ থেকে বাড়তি পরিমাণে পেঁয়াজ আনছেন না। ঝুঁকি নিয়ে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করতে পারত বলে মনে করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তাই সরবরাহ ঘাটতি কমেনি। সংকট কাটেনি।

গোলাম রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে চাহিদার দুই–তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এক-তৃতীয়াংশ আসে ভারত থেকে, যা প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার টন। ভারত যখন রপ্তানি বন্ধ করে দিল, এই পরিমাণ পেঁয়াজের একটা ঘাটতি তৈরি হলো। এ ছাড়া বন্ধ ঘোষণা করার আগে ভারত কিছু বলেনি। হঠাৎ করেই ঘাটতি হলো। সরকার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করল অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যাপারে। তবে ব্যবসায়ীরা আমদানির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই জোগানের ঘাটতি থেকেই গেল। সরকার বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে পেঁয়াজ আমদানি করতে অনুরোধ করেছিল। তারা পেঁয়াজ আমদানি করেছে বলে আমি খবর পাইনি। ফলে সব মিলিয়ে দাম বাড়তে থাকল। যাদের কাছে কিছু পেঁয়াজ ছিল তারা দাম বাড়িয়ে দিল। সরকার কিছু অভিযান চালাল, জরিমানা করল। দাম বেঁধে দিল। যাদের কাছে পেঁয়াজ ছিল তারা ভাবল এই দামে তাদের পোষাবে না। তারা বিক্রি করল না। ফলে সংকট তৈরি হলো।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ১৮ লাখ ৩ হাজার টন। দুই সরকারি সংস্থার হিসাবে ৫ লাখ টনের গরমিল। এই হিসাব ধরে পেঁয়াজের বাজার নিয়ে সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।

ভারতের পর পেঁয়াজের বড় উৎস মিয়ানমার। মিয়ানমার থেকে আমদানিকারকেরা বলেছেন, টেকনাফ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দেড় মাস ধরে আমদানিমূল্য টনপ্রতি ৫০০ ডলার বা কেজিপ্রতি ৪২ টাকা দেখাচ্ছে। যদিও সেটা এখন ৯৩ টাকায় উঠেছে।

আরও পড়ুন
একটি পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৭০ টাকা