Thank you for trying Sticky AMP!!

পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে গার্মেন্টস সংহতির গবেষণা প্রতিবেদন

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচকদের একাংশ। সংগঠনটি পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান নিয়ে ‘কী করে বাঁচে শ্রমিক’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন তৈরি করে। জাতীয় প্রেসক্লাব, ১০ আগস্ট। ছবি: সংগৃহীত

তৈরি পোশাকখাতের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এবং দেশি মালিক—এই দুই পক্ষের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা কমিয়ে আনতে হবে। এটা করতে পারলে বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করা সম্ভব।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে ‘কী করে বাঁচে শ্রমিক’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ এবং মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য জানান বক্তারা। শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই সভা হয়।

সম্প্রতি দেশের ৬টি শিল্পাঞ্চলে ২০০ শ্রমিকের অংশগ্রহণে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে গার্মেন্টস সংহতি। প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন পোশাক শ্রমিক বেতন, ওভারটাইম, হাজিরা বোনাসসহ মোট ৮ হাজার ২০০ টাকা আয় করেন। প্রতিটি পোশাক শ্রমিকের পরিবারে গড়ে দুজন উপার্জনকারী সদস্য রয়েছেন, চার সদস্যের একটি পরিবারের মোট আয় ১৫ হাজার ৮৬৩ টাকা। ৬১ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন, তাঁর আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা সামাল দেওয়ার জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বিভিন্ন উৎস থেকে নিয়মিত ঋণ নেন এবং খাদ্য ও বাসাভাড়া বাবদ ব্যয় কমিয়ে দেন। গড়ে একজন পোশাক শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের পাশাপাশি মাসে গড়ে ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত ওভারটাইম করেন। ফলে শ্রমিকেরা প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম থেকে বঞ্চিত হন।

তাসলিমা আখতার বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতিসহ সব প্রগতিশীল শ্রমিক সংগঠন মালিকপক্ষ থেকে প্রস্তাব করা ৬ হাজার ৩৬০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।’

তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনো শিল্পের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের শক্তির ভিত্তিতে। তাই ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে শ্রমিক সংগঠনের শক্তি বাড়াতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মতবিনিময়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার ও মালিকপক্ষ যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করছে, তা পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন বলেন, সরকার পোশাক কারখানার মালিকদের জন্য বহুবিধ কর সুবিধা রাখলেও শ্রমিকদের কল্যাণ নিয়ে ততটা ভাবছে না। সরকারের উচিত মালিককে কর দেওয়ার বদলে শ্রমিক পরিবারগুলোর জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা। গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেলের কয়েদির চেয়েও পোশাক শ্রমিকেরা নিম্নমানের জীবন যাপন করছেন।

শ্রমিকবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দর-কষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে এবং এই ব্যর্থতার দায়ভার এককভাবে বইতে হচ্ছে দেশের শ্রমিক শ্রেণিকে।’

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আতিউল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল, নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী সরকার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা।