Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রযুক্তির পিঠে পর্যটনের উড়াল

গো–যায়ানের প্রতিষ্ঠাতা রিদওয়ান হািফজ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশীয় ট্রাভেল টেক কোম্পানি গো–যায়ানের প্রচারণা অনেকেরই চোখে পড়েছে। তবে গো–যায়ান নিয়ে সবার আগ্রহ বেড়েছে, যখন জানা গেল প্রতিষ্ঠানটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২২ কোটি টাকা বৈদেশিক বিনিয়োগ পায়। তাদের শুরু, চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের কথা জানতে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে গো–যায়ানের কার্যালয়ে হাজির হই। সেখানেই গো–যায়ানের প্রতিষ্ঠাতা রিদওয়ান হাফিজের সঙ্গে চমৎকার একটা আড্ডা হয়।

রিদওয়ান হাফিজের স্বপ্নের শুরুটা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ার সময় আহসানউল্লাহ হলে থাকতে। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সময় পরিবারের কিছুটা দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে ভাবতে থাকেন কী করা যায়। দেখলেন দেশে ডেটা বা উপাত্ত নিয়ে কাজ হয় কম, উপাত্ত বিশ্লেষণ আরও কম। আহসানউল্লাহ হলের ৩৪৭ নম্বর রুম থেকে বন্ধু সুমিত সাহার সঙ্গে ১৩ বছর আগে শুরু করেন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘অ্যানালাইজেন বাংলাদেশ লিমিটেড’। এরই মধ্যে দেশের অন্যতম বড় ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের ছয়টি দেশে নিজেদের সম্প্রসারিত করেছে অ্যানালাইজেন বাংলাদেশ।

একনজরে

গো–যায়ান

প্রতিষ্ঠা

২০১৭

প্রতিষ্ঠাতা

রিদওয়ান হাফিজ

কর্মী

৭৫

মাসে ওয়েবসাইট ভিজিট

৭ লাখ

ব্যবসার ধরন

পর্যটন

সেবা

হোটেল–রিসোর্ট ও বাস–ট্রেন–উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং, ট্যুর অপারেটর, ভ্রমণের জন্য ঋণ

অ্যানালাইজেনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই স্বপ্নবান তরুণ উদ্যোক্তা নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন নতুন উদ্যমে, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। দেশের পর্যটনশিল্পকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে গড়ে তোলেন ট্রাভেল টেক কোম্পানি ‘গো–যায়ান’। যে দেশে একটি সফল উদ্যোগ গড়ে তোলা কষ্টের, সেখানে কেন নতুন প্রচেষ্টা?

কাজের প্রয়োজনে প্রচুর দেশের বাইরে যাওয়া হতো রিদওয়ানের। সে সময়ই তিনি অনুভব করেন বিদেশভ্রমণে এ দেশের মানুষকে কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটালাইজেশনে পিছিয়ে থাকার মধ্যে নিজের সম্ভাবনার খোঁজ পান রিদওয়ান। বললেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া সম্ভব। এ জন্যই এই নতুন ট্রাভেল টেক।’ ভাগনে জায়ানের আবদার মেটাতে তার নামেই ‘গো–যায়ান’।

শুরুটা গল্পের মতো মনে হলেও যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার পর শুধু পর্যালোচনা ও গবেষণায় চলে যায় এক বছর। নানামুখী বিচার–বিশ্লেষণ শেষে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। খুব কাছের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী থেকে মূলধন জোগাড় করে গো–যায়ানের চাকা ঘুরতে থাকে। তবে শুরুতেই বোঝা গেল এ খাতে অবস্থান তৈরি করতে হলে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এ সময় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের চক্রান্তের শিকার হয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তারপরও দমে যায়নি রিদওয়ান ও তাঁর দল। এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক—ওসিরিস ইম্প্যাক্ট ভেঞ্চার। প্রি-সিরিজ রাউন্ডের বিনিয়োগ দিয়ে শুরু হয় নতুন স্বপ্ন বোনার কাজ। দেশীয় প্রযুক্তিতে গড়ে উঠতে থাকে বিশ্ব মানের অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম। সেরা মানের গ্রাহক সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে গ্রাহকের জন্য আনতে থাকেন নানা রকম সুযোগ। এভাবে গ্রাহকের মন জয় করে ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা তৈরি হতে থাকে।

ঠিক সেই সময়েই ছন্দপতন। করোনা মহামারির কবলে পড়ে সারা বিশ্ব। বন্ধ হয়ে যায় আন্তদেশীয় বিমান যোগাযোগ। মুখ থুবড়ে পড়ে পর্যটনশিল্প। থমকে দাঁড়ায় ‘গো–যায়ান’। মাসের পর মাস বন্ধ রাখতে হয় সব কার্যক্রম। একপর্যায়ে খরচ কমাতে ছেড়ে দিতে হয় সুন্দর সাজানো অফিস।

সবাই যখন তাঁকে রণে ভঙ্গ দিতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন, তখনই নতুন করে যুদ্ধে নামেন লড়াকু এই যোদ্ধা। রিদওয়ান বুঝতে পেরেছিলেন পরিস্থিতি একদিন স্বাভাবিক হবে। ঘরবন্দী ভ্রমণপিপাসু মানুষ ছুটবে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে। তবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগলেও, আপাতত মানুষ ছুটবে দেশের ভেতরের পর্যটনকেন্দ্রে। গো–যায়ান তাই তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে দেশীয় পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করে। করোনার বিধিনিষেধের মধ্যে যার যার বাসায় বসে কাজ করেই তৈরি করে বিশ্ব মানের হোটেল ব্যবস্থাপনার সমাধান। সেটি বিনা মূল্যে সরবরাহ শুরু করে হোটেলগুলোতে। হোটেলগুলোও এগিয়ে এল নানা রকম অফার নিয়ে। দেশের পর্যটন এলাকাগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হতেই ঘুরে দাঁড়ায় গো–যায়ান।

রিদওয়ান হাফিজ বললেন, ‘একটা স্বপ্নকে একা বড় করে তোলা যায় না। অনেক মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে। তাই আমি বিশ্বাস করি, নিজের স্বপ্নকে অনেকের মাঝে বপন করে দিতে পারাটাই একজন উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় সাফল্য।

রিদওয়ান স্বপ্ন দেখেন অচিরেই তিনি বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন। সেদিনের প্রত্যাশায় কাজ করে চলেছে রিদোয়ান ও তাঁর স্বপ্নের গো–যায়ান।


● শফিউল আলম: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রোটিন মার্কেট