Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ৯% সুদে ঋণ দিতে সম্মত ২৪ সংস্থা

ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার (এমএফআই) ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিতে পড়া গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২৪ টি এমএফআই ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে ৩ শতাংশ ঋণ পাবে এসব সংস্থা। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষতিগ্রস্থ নিম্ন আয়ের পেশাজীবি, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রথমবারের মতো কম সুদে ঋণের সুযোগ পাবেন। সারা দেশে এই ২৪ টি এমএফআইয়ের সদস্য প্রায় ৩০ লাখ।

আর এমএফআইদের ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে অর্থ নিতে চুক্তি করেছে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংক। এ সব সংস্থা ও ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এই তহবিল থেকে এই ঋণ দেওয়া হবে।  বাংলাদেশ ব্যাংক ১ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিবে, আর ব্যাংকগুলো ৩ শতাংশ সুদে দিবে এমএফআইকে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পাবে ৯ শতাংশ সুদে।

এমএফআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোনো সদস্যদের ঋণ দেওয়া হবে, তাই কম সুদে দেওয়া যাবে। এতে পরিচালনা খরচ কম হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া গেলেও, এটা সবসময় সম্ভব না। 

এমএফআইগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্ষুদ্র ঋণের সুদ হার সবোচ্চ ২৪ শতাংশ নির্ধারন করে দেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুদ কমিয়ে আনার সুযোগ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সার্বিকভাবে এমএফআইয়ের সুদ কমােনা সম্ভব কিনা, জানতে চাইলে এমআরএ নিবাহী ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এমএফআইগুলো ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে রাজী হয়েছে। আমরা এমনিতেও সুদ হার কমিয়ে এনেছি। এটা সময়ের সঙ্গে পরিবতর্নশীল। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এটা পরিবতর্ন হয়।

 তবে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কম সুদে ঋণ পাবে। তবে দেখতে হবে, যাদের জন্য এই ঋণ, তারা পাচ্ছেন কিনা। কারণ, এমএফআইগুলো যেখানে কম ঝুকি, সেখানে এই ঋণ দেবে। এতে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।

জাহিদ হোসেন বলেন, সব দেশেই ক্ষুদ্র ঋণের সুদ বেশি। তাই হঠাৎ করে সুদ কমিয়ে দেওয়া যাবে না। তবে এবার যেহেতু কম সুদে তহবিল দেওয়া হচ্ছে,তাই তদারকি জোরদার করতে হবে। যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থরা এই ঋণ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। 

জানা গেছে, এমআরএ নিবন্ধিত প্রায় ৭শ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা রয়েছে। তাদের রয়েছে ১৮ হাজার শাখা। সারা দেশে এমএফআইগুলোর সদস্য রয়েছে প্রায় ৩ কোটি। এসব সংস্থার সদস্যরা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন। আর ঋণ নিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আলাদ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য এমএফআইগুলোর মাধ্যমে কম সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পিপলস ওরিয়েন্টেডে প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) দেশের ২১ টি জেলার ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের সদস্য রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার। পপি'র পরিচালক (ক্ষুদ্র ঋণ) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের অনেক সদস্য ক্ষতিতে পড়েছেন। তাদের ঋণ দিতে আমরা নতুন সেবা পণ্য চালু করবো। এতে আমাদের নতুন করে কোন নথিপত্র তৈরি করতে হবে না। এভাবে আমরা খরচ কমিয়ে এনে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। 

 সদস্যরা কি পরিমাণ ঋণ পাবে
এ তহবিলের টাকা কিভাবে ব্যবহার হবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, শুধু এমএফআই বা এমএফআইয়ের সমিতিভুক্ত সদস্যরা এ ঋণ নিতে পারবে। আর এমআরএ অনুমোদনের বাইরে কোন এমএফআই  ঋণ পাবে না।

কে কি পরিমাণ ঋণ পাবে তাও তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বিগত তিন বছরের যা ঋণ দিয়েছে তার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। আর একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা এবং গ্রপ হিসাবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ঋণ পাবে। ক্ষুদ্র ঋণের মেয়াদ হবে এক বছর। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা একাই ১০ লাখ টাকা ও গ্রুপ হিসাবে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবে। গ্রুপের সদস্য কমপক্ষে ৫ জন হতে হবে। এর বেশি সদস্য হলে আনুপাতিক হারে বেশি ঋণ পাবে।  ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ঋণের মেয়াদ হবে দুই বছর।

রাজধানীর পাশে আটিবাজারে পপি থেকে ঋণ নিয়ে কসমেটিকের পাইকারি ব্যবসা করেন মানজিদা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২ লাখ টাকা ঋণ আছে। ২ মাস ধরে সব বন্ধ, বাসা ভাড়াও দিতে পারছি না। ঋণের কিস্তিও দিতে পারছি না। ভবিষ্যত কি, কিছুই বুঝতে পারছি না।

৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন আপনি,জানালে বলেন, 'এটা হলে খুবই ভালো। এমনিতে অনেক সুদ দেওয়া লাগে। ব্যবসার কিছু থাকে না।'

উল্লেখ্য, করোনার কারণে আগামী জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে এমআরএ।

ঋণের মেয়াদ
একক ও গ্রপ ভিত্তিক ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১ বছর। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ২ বছর। তবে এক্ষেত্রে একজন একক উদ্যোক্তা বা একটি গ্রুপ শুধুমাত্র একটি ক্যাটাগরিতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রাপ্য হবেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ তহবিলের আওতায় এমএফআইগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে। আর তফসিলি ব্যাংকগুলো এমএফআই নির্বাচন করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। বাংলাদেশ বাংক ১ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে। এ ঋণ দিয়ে আগের অন্য কোন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না।  আবার একই ব্যক্তি দ্বিতীয় বার ঋণ নিতে পারবে না।

ঢাকা, চট্রগ্রাম ও খুলনার ১২ টি জেলায় ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে দু:স্থ স্বাস্থ কেন্দ্র (ডিএসকে)। সংস্খাটির ২ লাখ ৭৪ হাজার সদস্য ঋণ নিয়েছে। ডিএসকে'র নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিংহ প্রথম আলােকে বলেন, আমরা বিভিন্ন দুর্যোগে কম সুদে ঋণ বিতরণ করেছি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, সারা দেশেই আক্রান্ত। এজন্য ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া আমাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। এরপরও গ্রামীন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আমরা এতে সম্মত হয়েছি। এতে কৃষক, দোকানদার ও বিভিন্ন পেশার সদস্যরা উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আথিক অন্তভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে এ উদ্যোগ। প্রায় ৩ কোটি মানুষ এমএফআই থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে। এর ফলে তারা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। যা তাদের ঘুরে দাড়াতে সহায়তা করবে। আশা করছি, এতে গ্রামীন অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।   

কোন এমএফআই কম সুদে ঋণ দেবে
৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশন, আশ্রয়, খ্রিস্টিয়ান সার্ভিস সোসাইটি, কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোস্যাল ট্রান্সফরমেশন, দু:স্থ স্বাস্থ কেন্দ্র (ডিএসকে), গ্রাম উন্নয়ন কর্ম, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, মমতা, মানবিক সাহায্য সংস্থা, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, পিপলস ওরিয়েন্টেডে প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি), রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার, রুরাল রিকন্সট্রাকশন ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর ডেলেলমমেন্ট ইনশিয়েটিভ(এসডিআই) ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এসব এমএফআই সবাই ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেছে। 

ওয়ান ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেছে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, সেতু ও সোসিও ইকোনোমিক হেলথ এডুকেশন ওর্গানাইজেস। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে আবেদন করেছে সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা। সাউথইস্ট ব্যাংকের আবেদন করেছে গ্রামীন মানবিক উন্নয়ন সংস্থা, সাতক্ষীরা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সোসিও ইকোনোমিক ব্যাকিং অ্যাসোসিয়েশন(সেবা)। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ঋণ পেতে আবেদন করেছে সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসিস্টটেন্ট। তাদের সবমিলিয়ে সদস্য রয়েছে ৩০ লাখ।