Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রোটন সাগায় পিএইচপির 'গতি'

পিএইচপির গাড়ি সংযোজনের কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো সেডান কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি সংযোজনের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রামের পিএইচপি গ্রুপ। দুই বছর পর তারা অনেকটা নিভৃতে গাড়ি বাজারজাতও শুরু করে। এরই মধ্যে পেরিয়ে যায় আরও দুই বছর। গাড়ি সংযোজন শিল্প থেকে পিএইচপি হারিয়ে গেল কি না, এমন প্রশ্ন যখন মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তখনই আবার দেখা মিলল তাদের। দেশে সংযোজিত মালয়েশিয়ার প্রোটন সাগা

মডেলের গাড়ি বাজারে এনে সাফল্য পেল তারা।

পিএইচপি গত তিন মাসে প্রোটন সাগা মডেলের ১৫০টি গাড়ি সংযোজন করে বিক্রি করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২০০টি সংযোজন করা হবে। বাজারে ক্রেতাদের সাড়া পাওয়ায় পিএইচপি খুশি। বিষয়টি টের পাওয়া গেল গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় পিএইচপি সেন্টারে গিয়ে। ভবনটির আটতলায় পিএইচপি অটোমোবাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ আকতার চৌধুরীর কার্যালয়। কক্ষের দরজা খুলতেই ফুরফুরে দেখা গেল তাঁকে। হাসিমুখে ল্যাপটপ খুলে বিক্রির তথ্য দিলেন।

দেশে বছরে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি হয় ২৪ থেকে ২৭ হাজার। এর ৯০ শতাংশই পুরোনো। নতুন গাড়ির পক্ষে বাজার দখল বেশ কঠিনই। যন্ত্রাংশ সহজে পাওয়ায় যায়, দামও কম—এ দুই যুক্তিতে বিক্রিতে এগিয়ে আছে পুরোনো গাড়ি। পারভেজ আকতার চৌধুরী জানালেন, প্রোটন সাগা (১৩৩২ সিসি) এই দুই ক্ষেত্রে পুরোনো গাড়ির চেয়ে পিছিয়ে নয়, বরং এগিয়ে আছে। এই মডেলের একটি গাড়ির দাম ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকা। সংযোজনের আগে আমদানি করা এই গাড়ি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৮ লাখ টাকায়। দেশে সংযোজনের কারণে ক্রেতাদের সাশ্রয় সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো। আবার পাঁচ বছরের নিশ্চয়তা (ওয়ারেন্টি) ও দেড় লাখ কিলোমিটারের বিক্রয়োত্তর সেবা তো আছেই। তাঁর প্রশ্ন, পুরোনো গাড়ির চেয়ে কম দামে নতুন গাড়ি পাওয়া গেলে কেন বিক্রি হবে না?

পিএইচপির কারখানা চট্টগ্রামের সাগরিকায়। বাজারে বিক্রি বাড়ায় সেখানে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কারখানার ২৫৮ জন প্রকৌশলী ও মিস্ত্রির ব্যস্ততার শেষ নেই। তাঁদের হাতেই আট হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম সংযোজন করে
তৈরি হয় একেকটি গাড়ি। এখন
দিনে এক পালায় সংযোজিত হয় ১২টি করে।

দুই বছর আগে ‘প্রোটন প্রিভে’ মডেলের গাড়ি বাজারজাত শুরু করে পিএইচপি। সেটা ছিল গাড়ি সংযোজনের শুরুর ধাপ। তখন সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে গাড়ি সংযোজন করা হতো। এতে খরচ বেশি পড়ত। পিএইচপির কর্মকর্তারা দেখলেন, পুরোপুরি সংযোজনের চেয়ে গাড়ির কিছু কাজ এখানেই করা যেতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা গাড়ির রং করার কাজ নিজেদের কারখানায় শুরু করেন। পাশাপাশি কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। এখন প্রোটনের চারটি মডেলের সেডান গাড়ি সংযোজন করছে কোম্পানিটি। 

গাড়ির বাজারে পিএইচপির নাম লেখানোর সঙ্গে যুক্ত আছে মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নামটি। বছর পাঁচেক আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ঢাকায় আসেন মাহাথির মোহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয়টি পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত। 

অনুষ্ঠান শেষে পিএইচপির ব্যবসা-বাণিজ্যেরও খোঁজ নেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি তখন মালয়েশিয়ার গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানি প্রোটন হোল্ডিংস বারহাদের চেয়ারম্যান। মালয়েশিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি পিএইচপি পরিবারকে প্রোটনের কারখানা দেখার নিমন্ত্রণ জানান। পিএইচপির প্রতিনিধিরা মালয়েশিয়ায় যান। মাহাথির মোহাম্মদ তখন বাংলাদেশে প্রোটনের গাড়ি কারখানা নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তাঁর পরামর্শ পেয়ে পরের বছরই বিনিয়োগ শুরু করে পিএইচপি। সেডান গাড়ি সংযোজনও শুরু হয় পিএইচপির হাত ধরে।

পিএইচপি জানায়, গাড়ি সংযোজন থেকে উৎপাদন পর্যন্ত যেতে পাঁচটি ধাপ রয়েছে। তারা এখন গাড়ি সংযোজনের দ্বিতীয় পর্যায় পার করে তৃতীয় পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের সিংহভাগ দেশে উৎপাদিত হলে তৃতীয় পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে সংস্থাটি। গাড়ির পুরো বডি ও চেসিস (কাঠামো) তৈরি হলে চতুর্থ এবং ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব হলে পুরোপুরি উৎপাদকের তালিকায় নাম লেখানো সম্ভব হবে। অবশ্য এ জন্য পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ।