Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্ধ হচ্ছে গ্ল্যাক্সোর ওষুধ কারখানা

গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইনের ওষুধ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। কারখানা বন্ধের ঘোষণায় আন্দোলনে নামেন কারখানাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত কারখানা ভবনের সামনে। ছবি-সংগৃহীত
>

• ১৯৬৩ সালে ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়
• কারখানায় ১৫০ জন কর্মকর্তা, ২৫০ জন কর্মী
• অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ২০০ জন
• ভোগ্যপণ্য ও ভ্যাকসিন ব্যবসা চালিয়ে যাবে কোম্পানিটি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জেএসকে) বাংলাদেশে তাদের ওষুধ কারখানাটি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের কারখানায় এই ঘোষণা দেওয়ার পর সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মীরা। এর আগে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় কারখানা বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্ষদ সভার সেই সিদ্ধান্তের কথা কারখানায় জানানো হলে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মীরা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং পুষ্টিকর খাদ্য বা স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের ব্যবসা রয়েছে বাংলাদেশে। ওষুধ কারখানা বন্ধ হলেও ভ্যাকসিন এবং পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবসা চালু থাকবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

 প্রতিষ্ঠানটির একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই-তিন বছর ধরে ওষুধ ব্যবসায় ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে আসছে কোম্পানিটি। তবে হরলিকস, গ্লুকোজের মতো ভোগ্যপণ্যের ব্যবসার মুনাফা দিয়ে এ লোকসান পোষানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। মান ঠিক রেখে ওষুধ বানিয়ে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না বহুজাতিক এ কোম্পানিটি। আবার ওষুধ উৎপাদনে বেশ কিছু কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না জিএসকে।

এদিকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কবে থেকে উৎপাদন বন্ধ করা হবে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে এ বিষয়ে বিশেষ সাধারণ সভা করে শেয়ারধারীদের অনুমোদন নিতে হবে।

কারখানা-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল পাঁচটায় কারখানা মিলনায়তনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রিজিওনাল সাপ্লাই চেইনের প্রধান রাজু কৃষ্ণস্বামী ওষুধ কারখানার উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেন। এরপরই সেখানে হইচই শুরু করেন কর্মীরা।  কয়েক দফা মিছিল শেষে তাঁরা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন।

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াছ মুঠোফোনে কারখানা ফটক থেকে রাতে প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা চালু রাখার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রধান ফটকে অবস্থান নেবেন।  ইলিয়াছ আরও বলেন, কারখানায় ১৫০ জন কর্মকর্তা, ২৫০ জন কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ২০০ জন।

এদিকে গতকালের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারখানার প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি বাড়তি আর্থিক সুবিধা দিয়ে স্বেচ্ছা অবসরের সুযোগ দেওয়া হবে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয় এটি। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ১৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং দশমিক ৯১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। ২০১৭ সালের আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৫৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ফার্মা কোম্পানি বন্ধ হওয়ার খবরে গত ২৮ জুন থেকে পুঁজিবাজারে জিএসকের শেয়ারের দাম কমছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ২০৬ টাকা, যা গত ২৮ জুনে ছিল ১ হাজার ৪৪৮ টাকা।

জিএসকের পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওষুধ কারখানা বন্ধ হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকা ওষুধ কারখানা বন্ধ হওয়ায় কোম্পানিটির সার্বিক মুনাফা বাড়বে।

জানতে চাইলে জিএসকে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে ২০১৭ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক ফলাফল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উদীয়মান দেশের ওষুধ ব্যবসা আমরা সমন্বিতভাবে পরিচালনা করব। ব্যবসা পরিচালনায় টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।