Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ কী করবে?

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার সময় প্রতিবার আমাদের নীতিনির্ধারকেরা একটা কথাই বলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত তাঁরা এতটাই শক্ত করেছেন যে বিশ্ব অর্থনীতির এসব ঝঞ্ঝাট থেকে বাংলাদেশ মুক্ত। যেমনটি আমরা শুনেছি ১৯৯৭ সালের এশিয়া সংকট বা ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার সময়ে। তবে এর জন্য কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু ছিল না। কারণ, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্পৃক্ততা অনেকটাই কম। ফলে সহজে এর প্রভাব পড়ে না।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন আরেকটি সংকটের সামনে। প্রশ্ন হচ্ছে এবারও কি বাংলাদেশ মন্দা থেকে মুক্ত থাকবে? এটা ঠিক যে আগের চেয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছাড়াও বাংলাদেশ এখন নির্ভর করে প্রবাসী-আয়ের ওপর। তাহলে দেখা যেতে পারে এই দুই সূচকের কী হাল।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মাত্র দুই মাস গেল। এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে জুলাই মাসের রপ্তানির হিসাব। জুলাইয়ে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। এ সময়ে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। আবার প্রবাসী-আয়ের হিসাবটিও ভালো নয়। জুলাই ও আগস্ট-দুই মাসেই ঋণাত্মক। জুলাই মাসে প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ শতাংশ আর আগস্টে কমেছে ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সুতরাং দুটি সূচকই উদ্বেগ তৈরি করছে।
রপ্তানি ও প্রবাসী-আয় ধরে রাখার জন্য উঠতি অর্থনীতির দেশগুলো ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়নের পথ বেছে নিয়েছে। বিশেষ করে চীনের মুদ্রার দুই দফা অবমূল্যায়নের কারণে এমনটি করা ছাড়া আর কোনো পথও কারও জানা নেই। আমরা জানি, টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানিকারী ও প্রবাসীরা খুশি হন। কারণ, অবমূল্যায়ন হলেও ডলারের দাম দেশের মধ্যে বেড়ে যায়। ফলে যিনি আমদানি করেন, তাঁকে টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হয়। ফলে আগের চেয়ে ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে যিনি রপ্তানি করেন, তিনি মূলত ডলার উপার্জন করেন। আর সেই ডলারের বিনিময়ে ব্যাংক তাঁকে আগের চেয়ে বেশি অর্থ দেয়। ধরা যাক, অবমূল্যায়ন করে ৭৯ টাকার ডলার হয়ে গেল ৮০ টাকা। এতে রপ্তানিকারী আগের চেয়ে প্রতি ডলারে এক টাকা বেশি পাচ্ছেন। এতে রপ্তানিকারী উৎসাহ পাবেন, রপ্তানি বাড়াতেও চেষ্টা করবেন। একইভাবে প্রবাসীরাও আগের চেয়ে ডলার পাঠিয়ে বেশি টাকা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর আগের মতো সরাসরি অবমূল্যায়ন করে না। তবে বাজার প্রভাবিত করে টাকা-ডলারের মূল্যমান ঠিক রাখতে পারে। যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক দিন ধরেই ডলার কিনে টাকার দাম প্রায় একই রকম রেখেছে। কিন্তু চীনের অবমূল্যায়নের পরও তাই করবেন? প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধি কমার প্রেক্ষাপটে টাকার কিছুটা অবমূল্যায়ন করা হলে পরিস্থিতি খানিকটা ভালো হতে পারে। কিন্তু কাজটি কি করবে বাংলাদেশ? এখনই কি সেই সময়? নাকি অপেক্ষা করবে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার বাড়ানোর পরে বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির ওপর?