Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেট এল যেভাবে

স্যার রবার্ট ওয়ালপোল

পুরোনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে এসেছে বাজেট শব্দটি। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়–ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়। অবশ্য অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি বিষয়টিকে আরেকটু গভীরভাবেই বর্ণনা করেছে। এতে বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে যে কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করার মতো। ১৭৩৩ সালের ১৪ মার্চ ব্রিটেনের পার্লামেন্টে জাতীয় বাজেট ও রাজস্বনীতি উত্থাপনে শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। স্যার রবার্ট ওয়ালপোল ওই বাজেট ঘোষণা করেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ওয়ালপোলের থলে থেকে ওই দিন এক নতুন কৌশলই বের হয়েছিল।

 রাজা দ্বিতীয় জর্জের প্রথম মন্ত্রী স্যার রবার্ট ওয়ালপোল বর্তমান সময়ের প্রধানমন্ত্রীর মতো শাসনকাজ পরিচালনা করতেন। তাঁকে প্রথম প্রধানমন্ত্রীও বলা যায়। রাজা জর্জ ইংরেজি জানতেন না এবং শাসনসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাঁর তেমন আগ্রহও ছিল না। মূলত ওয়ালপোল রাজার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সংযোগ স্থাপন করতেন। অনেকটা ক্যাবিনেট শাসনব্যবস্থার মতো। এখানে আরেকটি যে নীতি প্রচলিত ছিল, তা হলো মন্ত্রিত্ব রক্ষার জন্য ওয়ালপোল রাজার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, কমন্স সভার সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। যদিও সভাসদেরা তাঁকে সমর্থন দিতে অনেকটা বাধ্য থাকতেন।

 যা–ই হোক, ওয়ালপোল চেয়েছিলেন নতুন বছরের আয়–ব্যয়ের হিসাবে ভূমির মালিকানা থেকে করের বোঝা একটু কমিয়ে ভোগ্যপণ্যের ওপর আবগারি শুল্ক বসাতে। তবে মনের কথা আগেই এ কান-ও কান হয়ে যায়। বাজেটে প্রকাশের কয়েক মাস আগে জানুয়ারিতেই এ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ওই মাসের মাঝামাঝি ওয়ালপোলের বিরোধীরা সোচ্চার হন এই বলে যে তিনি বিভিন্ন পণ্যের ওপরে শুল্ক আরোপের ঘোষণা করবেন। কয়েক মাস ধরেই এই গুজব চলতে থাকে। আবগারি শুল্ক তীব্রভাবে অপছন্দ করে মানুষ। মনে করা হয়, জনগণের সম্পত্তি ও দৈনন্দিন জীবনে আমলাদের হস্তক্ষেপ হবে ওই শুল্ক।

 ওয়ালপোল চেয়েছিলেন, ভূমির ওপর কর পাউন্ডে এক শিলিং কমাতে। আর এ জন্য সুধীজনের সম্মতি নিতে চেয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ১৪ মার্চ তীব্র উত্তেজনার মধ্যে সংসদে তাঁর প্রস্তাব প্রকাশ করেন ওয়ালপোল। প্রস্তাবগুলো ‘পুস্তিকা’ বা প্যাম্ফলেট আকারে প্রকাশ করেন তিনি। এই পুস্তিকা ছিল অনেকটা চিঠির ধরনে লেখা। এতে তামাক ও মদের ওপর আবগারি শুল্ক প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করে সাংসদদের মতামত চাওয়া হয়। ওয়ালপোল যুক্তি দেন, এর মাধ্যমে সর্বাধিক রাজস্ব আয় আসবে এবং চোরাচালান নিরুৎসাহিত হবে। চিঠির জবাব দেন বিরোধী দলের সে সময়কার সবচেয়ে চতুর নেতা উইলিয়াম পুলটেনসি। ‘সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের কাছে লেখা’ শীর্ষক ওই জবাবে বলা হয় ‘দ্য বাজেট ওপেন’ বা ‘অ্যান অ্যানসার টু আ প্যাম্ফলেট’। পুলটেনসি এই প্রস্তাবকে ‘ওয়ালপোলিয়ান কৌশল’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এর মানে হিসেবে বলেন, হাতুড়ে চিকিৎসকের প্রতারণামূলক প্রতিকার। পরে লন্ডনসহ সব প্রাদেশিক শহরগুলো থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে। কমন্স সভায় ওয়ালপোলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায় ভেঙে যায়। অবশেষে জনমতের বিরোধিতায় এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন ওয়ালপোল।

 ওয়ালপোল নেই, কিন্তু সেই বাজেট ঠিকই দেশে দেশে চালু হয়ে গেল।

 সূত্র: দ্য হিস্টরি অব পার্লামেন্ট, উইকিপিডিয়া, অক্সফোর্ড ডিকশনারি থেকে তথ্য নেওয়া